মা দিবসের নাটক ‘দূরত্ব’

নিরিবিলি চারপাশ। পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। ঝলমলে রোদে মাথার ওপর ছাদ হয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গাছ। গত শুক্রবার ২৭ মার্চ, দুপুরে ধানমণ্ডি লেকে এমন পরিবেশেই বসে গল্প করছিলেন অভিনেতা আব্দুন নূর সজল ও পিয়া বিপাশা।
এমনিতেই সময় কাটাতে তারা লেকের পাড়ে আসেননি। শুটিং করছিলেন আগামী ১০ মে মা দিবস উপলক্ষে ‘দূরত্ব’ নাটকের জন্য। ‘দূরত্ব’ নাটকটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন সাবিনা আনমন ও শাহাদাত রাসেল।
পরিচালক সাবিনা আনমন বলেন, ‘দূরত্ব নাটকটির গল্পটা চমৎকার। গল্পে দেখা যাবে, সজলের বাবা তার জন্মের কিছুদিন পরেই মারা যান। তারপর তার মা শম্পা রেজাকে পরিবার থেকে অনত্র বিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশে চলে যান তিনি। বহু বছর পর ছেলেকে দেখতে ঢাকায় ফেরেন শম্পা রেজা। আশা করছি নাটকটি দর্শকনন্দিত হবে।’
‘দূরত্ব’ নাটকটির গল্পের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দৃশ্যের শুটিং করা হয় ধানমণ্ডির একটি রেস্টুরেন্টে। সেখানে বসে সজল তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। মা শম্পা রেজা ছেলেকে দেখে একটু আবেগি হলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘কেমন আছো? কিছু খাবে? অনেক মুটিয়ে গেছো দেখছি।’
সজল মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছেন। একটু পর বললেন, ‘কিছু খাব না।’
শট ওকে করলেন পরিচালক। শট শেষ হওয়ার পর শম্পা রেজা ও সজল একসঙ্গে খেতে বসলেন। তাঁদের দেখে মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই মা-ছেলে।
মা-ছেলের প্রসঙ্গ আনতেই সজল বললেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে শম্পা আন্টির জন্য।’
আমরা আজ মা-ছেলে। ‘সুপারস্টার’ নাটকে আমাদের মধ্যে অসম প্রেম ছিল। অনেকগুলো দৃশ্য ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে শম্পা আন্টিকে ধন্যবাদ দেই। কারণ তিনি সাহায্য না করলে অভিনয় ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হতো না। মাঝে মাঝে কাজ করতে করতে চরিত্রের মধ্যে এমনভাবে ঢুকে যাওয়া হয়, তখন নিজের সত্তা খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন হয়।’
শম্পা রেজা একটু যোগ করে বললেন, ‘অভিনয়টাই এ রকম। অনেক রোমাঞ্চকর। সঞ্চিত অভিজ্ঞতাগুলো অনভূতি হয়ে অভিনয়ের সময় বেরিয়ে আসে। কিছুটা কাল্পনিক, কিছুটা বাস্তব। আসলে অ্যাকটিং ইজ রিঅ্যাকটিং। পড়াশোনা করিয়ে অভিনয় শেখানো সম্ভব নয়।’
এ প্রসঙ্গে সজল বললেন, ‘আসলেই তাই। আজকের প্রথম দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় আন্টির অভিনয়ের অভিব্যক্তি দেখেই আমার মধ্যে কী যেন ঘটে গেল। আশপাশে চেয়ার-টেবিল কী কী আছে এসব তখন মাথায় থাকে না। পড়া মানুষকে একভাবে সমৃদ্ধ করে আর দেখে পর্যবেক্ষণ করার মধ্যে আলাদা একটা বিষয় রয়েছে।’
শম্পা রেজা যোগ করে বললেন, ‘সোনা-গয়না-সম্পদ জমিয়ে রাখলে অভিনেতা হওয়া যায় না। অভিনেতা হওয়ার জন্য প্রাত্যহিক জীবনের অনুভূতিগুলো সংগ্রহ করে রাখতে হয়।’
গল্প করতে করতেই খাওয়া শেষ হলো। তাঁরা আবার চলে গেলেন শুটিংয়ে।
কিছুক্ষণ পর সেটে ফিরলেন অভিনেত্রী পিয়া বিপাশা।
এতক্ষণ কোথায় ছিলেন জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, ‘কাল সারা রাত ঘুমাইনি। তাই শুটিংয়ে ব্রেক পেয়েই ঘুমিয়েছিলাম।’
নাটকে নিজের চরিত্র নিয়ে পিয়া বললেন, ‘আমি এখানে সজল ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড থাকি। সে তার মাকে অনেক বেশি অনুভব করে। মা দেশে ফিরবে তাই আমাকে নিয়ে মার জন্য উপহার কিনতে যায়। আমাদের মধ্যে যতক্ষণ না প্রেমালাপ হয় তার চেয়েও বেশি মাকে নিয়ে অনেক গল্প হয়।’
শম্পা রেজা ও সজলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে পিয়া বলেন, ‘অভিনয়ের শুরুর দিকে এত বড় মাপের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি।’
মা দিবসের এই নাটকটি সবার হৃদয়ে দাগ কাটবে।
ধীরে ধীরে শুটিং সেটের পরিবেশ হালকা থেকে ভারী হতে শুরু হলো। কারণ মা-ছেলের অভিনয় যেন সবাইকে আবেগি করে তুলছে। আবেগের রেশ নিয়েই আমরা শুটিং স্পট ত্যাগ করলাম।