দেশী চলচ্চিত্রে নায়িকা সংকট

বর্তমানে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে অনেক ধরনের সংকট চলছে এর মধ্যে তীব্র সংকট নায়িকা নিয়ে। এখানে যেহেতু একটি ছবিতে কোটি টাকার ওপরে খরচ হয় আবার সেটি তুলতে হয় সাধারণ মানেুষের কাছ থেকে তাই সব নির্মাতা বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায় নির্ভরযোগ্য নায়ক-নায়িকা নিয়ে কাজ করতে, যাদের নাম শুনে দর্শক হলে আসবে। সমস্যা হচ্ছে যাঁদের নাম শুনে দর্শক হলে আসে তাঁদের নিয়েও নির্মাতাদের আছে নানা অভিযোগ। বর্তমানে যাঁদের নামে বা পোস্টারে ছবি দেখে দর্শক হলে আসে তাঁরা হলেন অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহী, ববি হক, বর্ষা এবং নতুন যুক্ত হয়েছেন পরীমনি।
এর মধ্যে অপু বিশ্বাস, শাকিব ছাড়া অন্য নায়কদের সাথে কাজ করেন না। যে কারণে চাইলেই অপুকে নিয়ে যেকোনো পরিচালক তাঁকে ছবিতে নিতে পারেন না। কারণ সবাই শাকিব খানকে নিয়ে ছবি তৈরি করেন না। গল্পের প্রয়োজনেই অন্য নায়কদের নিয়ে কাজ করতে হয়। এ বিষয়ে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন আমি শাকিব ছাড়া অভিনয় করতাম না। এর মূল কারণ ছিল পরিচালকরা যখন দেখলেন আমাদের জুটিকে দর্শক ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন, শাকিব-অপু জুটি নিয়ে ছবি বানালে তাঁদের টাকা উঠে আসে- তখন নির্মাতারা আমাদের নিয়ে বেশি কাজ করেছেন। তবে কিছু দিন আগে আমি ঘোষণা দিয়েছি যে ভালো গল্প ও পরিচালক হলে সব নায়কের সাথে কাজ করতে চাই। এখন ভালো পরিচালক যদি ভালো গল্প নিয়ে না আসে সে ক্ষেত্রে আমি কী করব? আমিও অপেক্ষা করছি ভালো গল্পের জন্য।’
এই প্রজন্মের নায়িকাদের মধ্যে বেশ নাম করেছেন মাহিয়া মাহী। কিন্তু এই নায়িকা জাজ মাল্টি মিডিয়া ছাড়া অন্য কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ছবিতে কাজ করেন না। যে কারণে জাজের বাইরে যাঁরা ছবি নির্মাণ করেন তাঁরা মাহীকে নিয়ে কাজ করতে চাইলেও পারেন না্। এ বিষয়ে মাহী সব সময়ই বলেন- ‘জাজ আমার মা-বাবা আর আমি মা-বাবার অবাধ্য সন্তান নই। যারা আমাকে মাহিয়া মাহী বানিয়েছে তারাই আমার সব।’
ববি হক এরই মধ্যে দর্শকদের মাঝে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু নির্মাতাদের অভিযোগ তিনি পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী ছাড়া অন্য পরিচালকের ছবিতে কাজ করেন না। এ বিষয়ে ববি বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রে এসেছি তাঁর হাত ধরে। তা ছাড়া তাঁর সাথে আমার বোঝাপড়াটা ভালো, সে কারণে ইফতেখার স্যারের সাথে কাজ করতে ভালো লাগে। তার মানে এই না যে আমি অন্য কারো ছবিতে কাজ করব না। ভালো গল্প, ভালো নির্মাতা পেলে কাজ করার জন্য বসে আছি।’
এরপর চিত্রনায়িকা বর্ষার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের সংসার। বর্ষার আলাদা একটি ইমেজ থাকলেও আব্দুল জলিল অনন্তের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান মুনসুন ফিল্মের বাইরে কাজ করেন না। এই পর্যন্ত নায়িকা বর্ষার যত ছবি মুক্তি পেয়েছে তার প্রতিটিই অনন্ত জলিলের সঙ্গে। এ বিষয়ে বর্ষার একমাত্র নায়ক অনন্ত বলেন, ‘এটাই আমাদের বিজনেস পলিসি।’ এ কথা থেকেই বোঝা যায় বর্ষা অন্য কারো ছবিতে কাজ করবেন না।
এক বছর ধরে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়েছেন পরীমনি। তিনি মোটামুটি অনেক নায়কের সঙ্গেই কাজ করেছেন এবং একাধিক পরিচালকের ছবিতে কাজ করতেও তিনি রাজি, করছেনও। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটি ছবিতে কাজ করতে হলে সময় লাগে কমপক্ষে ৪৫ দিন। সারা বছর শুটিং করলেও একজনের পক্ষে বছরে নয় কি দশটি ছবির বেশি করা সম্ভব নয়।
তা হলে কীভাবে কাটবে এই নায়িকা সংকট? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান বলেন, ‘নতুনরা এগিয়ে না এলে এই সংকট কাটবে না। শুধু নায়িকা নয় এখন শিল্পী সংকট চলছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, অনেকেই আর্থিক বা অন্যভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। আপনারা যারা নতুন, চলচ্চিত্রে কাজ করতে চান তারা যেন সরাসরি শিল্পী সমিতিতে ছবি ও জীবনবৃত্তান্তসহ যোগাযোগ করেন। তাহলে আর কোনো ধরনের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সহযোগিতা করব এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি আপনাদের পথ দেখাবে।’
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে একসময় এই নায়িকা সংকট কেটে যাবে। কারণ বর্তমানে অনেক নতুন পরিচালক আসছেন এবং নতুন ধরনের ছবি তৈরি হচ্ছে। আর এসব নতুন কাজ থেকেই নতুন নায়িকা তৈরি হবে বলে অভিমত চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের।