মেধাস্বত্ব ফিরে পেতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ৫ চলচ্চিত্র প্রযোজকের আবেদন

মেধাস্বত্বের অধিকার ফিরে পেতে আবেদন করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজকরা। গত ৬ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর সকল প্রযোজকের পক্ষে আবেদন করেন পাঁচজন প্রযোজক। আবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন মন্ত্রণালয়টি।
জানা গেছে, কপিরাইট আইন ২০২৩ এর ১৭ ধারার উপধারা ৩ ও ২১ ধারা উল্লেখ করে এই আবেদন করেন পাঁচ প্রযোজক। তাদের দাবি, নানাভাবে ভুল বুঝিয়ে চলচ্চিত্রের স্বত্ব চলচ্চিত্রের সকল প্রযোজকদের কাছ থেকে লিখে নিয়েছে দ্বিতীয় পক্ষ লেবেল কোম্পানিগুলো। ফলে মালিকানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এমতাবস্থায় কপিরাইট অফিস থেকে সুরহা পেতে চাইলেও বিগত সরকারের আমলে তা প্রযোজকদের বিপক্ষে রায় দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রযোজকদের একটি আবেদন হাতে পেয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য কপিরাইট অফিসকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মেধাস্বত্বের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে দিয়েছে। দ্রুত এই বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলা হবে।
বিষয়টি জানতে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কপিরাইট রেজিস্ট্রার (যুগ্মসচিব) মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন বলে জানান। অন্যদিকে সংস্কৃতি সচিবকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আবেদনে যা লিখেছেন প্রযোজকরা, কপিরাইট আইন,২০২৩ এর ধারা ২ এর উপধারা ২৪ এ উল্লেখ রয়েছে চলচ্চিত্রের মূল মালিক উহার প্রযোজক। আমরা সাধারণত প্রচুর পরিমাণ অর্থ লগ্নি করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করি। কিন্তু ঐসকল চলচ্চিত্র বিভিন্ন ধরনের লেবেল প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারের জন্য আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে নামমাত্র একটি দলিল করে ৬০ বছরের জন্য মালিকানা স্বত্ব নিয়ে নেন। পরবর্তীতে আমরা ঐসকল চলচ্চিত্র আমাদের নিজস্ব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার করতে চাইলে তারা আমাদেরকে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে বাধা প্রয়োগ করেন। লেবেল প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয় যে, আপনারা আপনাদের মালিকানা আমাদের নিকট ৬০ বছরের জন্য একেবারেই হস্তান্তর করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, কপিরাইট আইন,২০২৩ এর ধারা ১৭ এর উপধারা ৩ এ উল্লেখ রয়েছে যে, একটি হস্তান্তর দলিল উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে দলিলটি পুনঃপরীক্ষণ, বর্ধিতকরণ বা বাতিলের ব্যবস্থা করা যাবে। কিন্তু কোন লেবেল প্রতিষ্ঠানই হস্তান্তর দলিলে এ শর্তটি উল্লেখ করেননি। তারা তাদের মনগড়া দলিলে আমাদের ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর করে নেন। এর ফলে আমরা প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এখানে আরও উল্লেখ যে, কপিরাইট আইন,২০২৩ এর ২১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, চলচ্চিত্রের মালিকানা হস্তান্তর হলেও উক্ত চলচ্চিত্র অন্যত্র পুনঃবিক্রয় হলে উক্ত পুনঃ বিক্রয় মূল্যের ২০ শতাংশ উক্ত চলচ্চিত্রের প্রযোজক পাবেন। কিন্তু লেবেল প্রতিষ্ঠান চলচ্চিত্রগুলো অন্যান্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে অথচ তার কোন অংশই আমারা প্রযোজকগণ পাচ্ছি না। অথচ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে কপিরাইট আইন অনুসারে চলচ্চিত্রের মালিকানা একেবারেই হস্তান্তরযোগ্য নয়। অন্যান্য দেশে কপিরাইট মালিকানা একেবারেই হস্তান্তর সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা যারা অনেক টাকা লগ্নি করে এসকল চলচ্চিত্র নির্মাণ করি দিনশেষে আমরা এর প্রকৃত রয়্যালিটি পাইনা। এর সকল মুনাফা ভোগ করেন বিভিন্ন ধরনের লেবেল প্রতিষ্ঠান।
আবেদনে আরও লেখেন, লেবেল প্রতিষ্ঠানের তৈরিকৃত দলিলের মাধ্যমে কপিরাইট অফিস কর্তৃক প্রদানকৃত কপিরাইট সনদগুলো দ্রুত বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার নিকট সবিনয়ে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি উক্ত চলচ্চিত্রের প্রযোজক হিসেবে আমরা যাতে করে অন্যত্র সম্প্রচারের জন্য লাইসেন্স প্রদান করতে পারি সে ব্যবস্থা রাখার জন্য অনুরোধ করছি এবং এসকল সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কপিরাইট অফিস যাতে করে কোন লেবেল প্রতিষ্ঠানের নামে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোন চুক্তিপত্র বা হস্তান্তর দলিল নিবন্ধন না করে ও চলচ্চিত্রের কপিরাইট সনদ ইস্যু না করে উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করেন প্রযোজকরা।