শিশু রোজাদারদের ইফতার ও সেহরি

পবিত্র মাহে রমজানের জন্য শুধু বড়রাই অপেক্ষা করে না, ছোট ছেলেমেয়েরাও সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে রোজা রাখার জন্য। অনেক ছোট ছেলেমেয়ে রোজা রাখতে বেশ পছন্দ করে। তাই পরিবারের সবাই তাদের রোজা রাখাকে শুধু উৎসাহিতই করবে না, বরং তারা যেন সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারে সে বিষয়টাকেও অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
সাধারণত সাত-আট বছর বয়স থেকে অনেক ছেলেমেয়েই রোজা রাখতে চায়। যখন তারা রোজা রাখবে, তখন পরিবারের সবাইকে বেশ কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষ রাখতে হবে, যেমন—প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ছে কি না, মাথা ঘোরানো বা মাথাব্যথার কোনো অভিযোগ করছে কি না ইত্যাদি।
আপনার বাচ্চা যাতে সুস্থভারে রোজা রাখতে পারে, সে ব্যাপারে আপনাকেই সচেতন হতে হবে। যেমন—সাধারণ সময়ে বাচ্চারা সারা দিন মোটামুটি খাবার খায়, কিন্তু রোজায় এই খাদ্য গ্রহণ মাত্র তিনবার হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার পুষ্টি ও খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথ যত্ন নিতে হবে, যেন কোনোভাবেই তাদের পুষ্টির ব্যাঘাত না ঘটে।
ইফতারে বাচ্চাদের খাদ্য অবশ্যই হতে হবে মুখরোচক ও পুষ্টিকর। সাধারণত লেবুর শরবত বা তাজা ফলের জুস বেশি পুষ্টিকর হয়ে থাকে। যদিও বাচ্চারা বাজারের কমার্শিয়াল ড্রিংকস খেতেই বেশি পছন্দ করে; কিন্তু সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় ঘরের তৈরি শরবত বা জুস তাদের জন্য বেশি উপকারী হয়। এ ছাড়া ইফতার মেন্যুতে বাচ্চাদের জন্য এমন একটি খাদ্য তৈরি করতে হবে, যা থেকে একসঙ্গে ব্যালান্স পুষ্টি (ক্যালরি/প্রোটিন/কার্বোহাইড্রেট/ফ্যাট) পাওয়া যায়। যেমন—মুরগির মাংস ও চিজ স্যান্ডউইচ, চিজ ও সবজির তৈরি পাস্তা অথবা নুডলস, মুরগির মাংস ও সবজির তৈরি রোল ইত্যাদি। ঘরে তৈরি এই খাদ্যগুলো খুবই পুষ্টিকর। এ ছাড়া ইফতারে দই/চিড়া/কলা বা অন্য যেকোনো ফল খাওয়ানো যেতে পারে।
খেজুর বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী। এর খাদ্য আঁশ, ক্যালরি ও আয়রন বাচ্চাদের জন্য অনেক পুষ্টিকর। অনেক সময় বাচ্চাদের জন্য সারা দিন রোজার পর অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার খেলে শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইফতার মেন্যুটি অবশ্যই একটু হালকা, পুষ্টিকর ও মুখরোচক হলে ভালো হয়। কলা ও দুধের ব্যানানা শেক, দুধ ও ডিমের তৈরি পুডিং, ফল ও দুধের তৈরি কাস্টার্ড, ডাল, চাল ও মাংসের তৈরি হালিম বা খিচুরি—এ জাতীয় খাবারগুলো খুবই পুষ্টিকর বাচ্চাদের জন্য। ইফতার মেন্যুটি যেন খুব বেশি মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। বাচ্চাদের ইফতারের সময় অনেক জোর করা ঠিক নয়। অল্প অল্প করে খাবার খেলেও অনেক ক্ষেত্রে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
বাচ্চারা ইফতার করার পর অনেক সময় রাতের খাবার খেতে চায় না, এই সময় রাতে তাদের জন্য হালকা খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেমন—পাউরুটি, জ্যাম, ডিম, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, রুটি, মাংস, সবজি, ডাল ইত্যাদি।
সেহরির খাবার অবশ্যই ভালোমতো লক্ষ রাখতে হবে। কেননা, রাতের খাবার অনেক বাচ্চারা ঠিকমতো খেতে চায় না, তাই সেহরিতে অবশ্যই ভালোমতো খাবার খাওয়াতে হবে, যেমন—নরম ভাত/সবজি (সুসিদ্ধ)/মুরগি বা মাছ/ডাল এবং দুধ বা দুধের তৈরি খাদ্য ইত্যাদি মেন্যুতে থাকতে পারে। সে সঙ্গে খেজুর বা কলা থাকলে তা থেকে ক্যালরি পাওয়া যায়। আম ও কলায় অনেক ক্যালরি পাওয়া যায়, তাই ইফতার বা রাতের খাবারের তালিকায় এ ফলগুলো রাখতে পারলে ভালো।
ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত বাচ্চাদের পানি খাওয়ার ব্যাপারটা অভিভাবকদের লক্ষ রাখতে হবে, যেন কোনোভাবেই পানি কম না খাওয়া হয়। এ ছাড়া বাচ্চাদের দুপুরে অবশ্যই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। অবশ্যই গোসল করতে হবে এবং মানসিকভাবে যাতে তারা খুব খুশি থাকে, এ ব্যাপারে পরিবারের সবাইকে একযোগে লক্ষ রাখতে হবে।
লেখক : তামান্না চৌধুরী, প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।