টিকা দেওয়ার পর শিশুর জ্বর?

টিকা দেওয়ার পর অধিকাংশ শিশুর জ্বর আসে। এটি সাধারণত ১০০ থেকে ১০১ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। এ সময় কী করবেন? এই বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৭১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. মশিউর রহমান। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : টিকা দেওয়ার সময় শিশুদের একটু সমস্যা হয়, যেমন একটু জ্বর হওয়া, টিকা দেওয়ার জায়গাটিতে ক্ষত হয়ে যাওয়া। এসব বিষয়কে শিশুদের চেয়ে তাদের মা-বাবারা বেশি ভয় পান। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : এই ক্ষেত্রে একটু বলি ছোট ছোট বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে প্যারাসিটামল বা নাপা ডোজ খাইয়ে টিকা দেওয়া যেতে পারে। এতে শিশু কাঁদবে কম। জ্বর নাও আসতে পারে। ভ্যাকসিনের কারণে জ্বর সাধারণত ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। কেউ হাসলেও খুসখুসে জ্বর যেমন ১০০ বা ১০১ থাকে। কখনো উচ্চ জ্বর হয় না। কাজেই মা-বাবার ভয়ের কিছু নেই। আর হলে প্যারাসিটামল আছে। এটি খাওয়ালে জ্বর কমে যাবে। আর দুদিন পর যদি জ্বর আসে, বুঝতে হবে এটি টিকার জ্বর নয়। অন্য কিছুর কারণে জ্বর আসার কথা ছিল, সেটি এসেছে।
মা-বাবার জন্য আমি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চাই। আমাদের দেশ হলো তৃতীয় বিশ্ব, উন্নয়নশীল। কাজেই আমাদের দেশ অনুদান নিয়ে যেই টিকাগুলো দিচ্ছে, এর বাইরে কিন্তু অনেক টিকা এখন উন্নত বিশ্বে দিচ্ছে। সেগুলো সরকারিভাবে দিচ্ছে। তবে আমাদের দেশের সরকার সেটা পারছে না। আশা করব, আগামী দিনে পারবে। তবে যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁদের বলব, আরো অনেক টিকা আছে, সেগুলো দিতে পারেন।
এর মধ্যে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো ম্যানিনজাইটিসের টিকা। মস্তিষ্কের সংক্রমণের টিকা। মস্তিষ্কের সংক্রমণ হলে শিশুটিকে সাধারণত বাঁচানো যায় না। আর যদি কিছু বেঁচেও থাকে, তাহলে অন্ধ হয়ে যায়, বোবা হয়ে যায়, কালা হয়ে যায় অথবা প্যারালাইজড হয়ে যায়। একটু সচেতন হয়ে এই ম্যানিনজাইটিসের টিকাটা দেওয়া উচিত। এটি নয় মাস থেকে শুরু করা যায়। তবে ব্রিটেনে একটি নতুন টিকা হয়েছে সেটি দুই মাস থেকে শুরু করছে। আগে তো এ ছিল, এখন বি এসেছে। আমাদের বাংলাদেশে এর যে চারটি টিকা রয়েছে এ সি ওয়াই, ডাব্লিউ- এগুলো নয় মাস থেকেই শুরু করতে পারি।
নয় মাসের সময় একটি ডোজ। তিন বছর, চার বছর পরে একটি ডোজ। এটি দিলে এই যে একটি সাংঘাতিক অসুখ এটি থেকে রক্ষা পাবে।
এরপর ধরুন কলেরা। আগে কলেরা হলে গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর মারা যেত। মহামারি আকারে হতো। কারণ, সেটি অনেক কমে গেছে। কলেরার টিকা বের হয়েছে এবং খুব ভালো। ভারতে এটি শুরু করেছে। আমাদের দেশেও আছে। আমি বলব, মা-বাবারা খুঁজে খুঁজে এই টিকাটি দেবেন। টাইফয়েডের টিকা রয়েছে। এটি আমাদের দেশেও তৈরি হচ্ছে। বিদেশেও রয়েছে। আমরা বহু আগে থেকে জানতাম, টাইফয়েড হলে আর মানুষ বাঁচে না। এখন তো সেটি নয়। টাইফয়েডের টিকা বের হয়েছে। অবশ্যই টাইফয়েডের টিকাটা খুঁজে খুঁজে দেবেন। আরেকটি হলো আমরা যেটা বলি বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু। এরও টিকা প্রতিবছর নতুন করে তৈরি করছে। যাদের ফুসফুসে সমস্যা আছে, অ্যালার্জি রয়েছে কিংবা কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের অবশ্যই টিকাটা দিতে হবে।
জরায়ুর ক্যানসারের একটি টিকা বের হয়েছে। আমরা নয় বছরের একটি মেয়েকে দিয়ে দিতে পারি। একটি টিকা দিয়েই যদি প্রতিরোধ করা যায়। তাহলে সেই টিকাটা দেওয়া উচিত।