ডায়েট করেও ওজন কমছে না, কেন?

ওজন কমানো রীতিমতো এক ধরনের যুদ্ধ। যাদের ওজন বেশি তারা বিষয়টি ভালোভাবেই বোঝেন। অনেকেরই কয়েক বছর ধরে ডায়েট করার পরও ওজন কমে না। আবার অনেকে স্বল্প সময়ের জন্য ডায়েট করেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
অনেকে রয়েছেন যাঁরা ওজন কমাতে ‘ইয়ো ইয়ো ডায়েট’ করেন। ইয়ো ইয়ো ডায়েটে কখনো ওজন কমানো হয়, আবার কখনো ওজন বাড়ানো হয়- এভাবে খাদ্যতালিকাটি চক্রাকারে ঘোরে। কয়েক বেলার খাবার বাদ দিয়ে এবং নিম্ন মাত্রার ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে এই ডায়েট করা হয়। এসব ডায়েট কিছু সময়ের জন্য ওজন কমালেও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনে না। কিছু সময়ের জন্য এই ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমলেও আবার ওজন আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। এ রকম আরো কারণ রয়েছে ডায়েট করেও ওজন না কমার।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানিয়েছে ডায়েট করেও ওজন না কমার কিছু কারণের কথা।
খাদ্যাভ্যাসকে অস্বীকার করা
দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই খাদ্যাভ্যাসকে অস্বীকার করেন। অর্থাৎ কোনো বেলার খাবারকে হয়তো বাদই দিয়ে দেন। এটা ঠিক নয়। দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট হয় তো স্বল্প মেয়াদি কাজ করতে পারে। এসব ডায়েটে ওজন কিছু সময়ের জন্য কমলেও যে ওজন ঝড়িয়েছেন সেটা পুনরায় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে বেড়ে যেতে পারে। আর দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট মেনে চলতে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, খাবারকে অবহেলা করে বা কোনো বেলায় খাবার বাদ দিয়ে ডায়েট করবেন না। আর ডায়েট শুরুর আগে ভাবুন, কী খাবেন, কখন খাবেন, কোথায় খাবেন এবং কেন খাবেন। সব নির্দিষ্ট করে ডায়েট শুরু করুন।
প্রোটিন না খাওয়া
ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রোটিন খাওয়া এবং ব্যায়াম করা খুব জরুরি। ওজন কমাতে চান- এমন বেশির ভাগ নারী এই বিষয়গুলো বোঝেন না। প্রোটিন না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, আর ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমন কার্যকরী হয় না। আবার অনেকেই থাকেন যারা কেবল খাবারই কম খান কিন্তু ব্যায়াম করেন না। প্রোটিন খাওয়া এবং ব্যায়াম করলে পেশি ভালো থাকে এবং শরীরে ভারসাম্য তৈরি হয়। ডাল, মুরগির মাংস, মাছ, দুধ, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস।
ঘুম না হওয়া
ঘুম ওজনের ওপর একটি বড় প্রভাব ফেলে। গবেষণায় বলা হয়, কম ঘুম বা বেশি ঘুম উভয়ই ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমান।
স্বাস্থ্যকর খাবারের ফাঁদ
আমরা অনেকেই বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চাই। আর খাবারের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য বিক্রির জন্য পণ্যের গায়ের ‘অমুক খাবারের স্বাস্থ্যকর বিকল্প’-এ ধরনের লেভেল লাগিয়ে বিষয়টিকে আকৃষ্ট করে তোলে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাবারগুলো তেমন স্বাস্থ্যকর হয় না। এসব খাবার কৃত্রিম চিনি এবং ক্যালোরি বেশি থাকে। যেমন : ফলের জুস, গ্র্যানোলা সেরিয়াল। তাই এ ধরনের খাবার খাওয়ার যদি ঝোঁক থাকে তবে তা বাদ দিন। কেননা এগুলো ওজন কমাতে তেমন কাজে আসে না।
মানসিক চাপ
মানসিক চাপ ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। মানসিক চাপে থাকলে করটিসল নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ওজন বাড়িয়ে তোলে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
দ্রুত ফলাফলের আশা
দ্রুত ওজন কমানোর আশায় অনেকেই ক্র্যাশ ডায়েট বা কুইক ফিক্স ডায়েট করেন। অনেকেই আবার এগুলো করে ব্যর্থ হয়ে বিষণ্ণতায় ভোগেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওজন একদিনেই কমে না। এ জন্য ধৈর্য ধরতে হয়। সময় ও সাধনা থাকতে হয়। মনে রাখুন, এটি মেরাথনের মতো ধীর এবং দীর্ঘ দৌড়, দ্রুত দৌড় নয়।
কী করতে পারেন
দ্রুত ডায়েট করে রাতারাতি ওজন কমানো আসলে তেমনভাবে কার্যকরী হয় না। ধীরে ধীরে শরীরের অবস্থা বুঝে খাওয়ার অভ্যাসকে পরিবর্তন করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি করে খান। এই ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফল ইত্যাদি খান এবং লাল মাংস এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেকোনো অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে কমপক্ষে কয়েক মাস লেগে যায়। তাই ওজন কমাতে ধৈর্য ধরুন, তাড়াহুড়া করবেন না। সীমিত খাওয়া ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলার অভ্যাস একবার আয়ত্তে চলে এলেই ওজন কমতে শুরু করবে।