পুরুষদের প্রোস্টেটগ্রন্থির সমস্যা হওয়ার লক্ষণ কী

বয়স বাড়তে থাকলে পুরুষদের প্রোস্টেটগ্রন্থির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৯৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এন আই ভূইয়া। বর্তমানে তিনি স্কয়ার হাসপাতালে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: প্রোস্টেটগ্রন্থি বলতে আমরা কী বুঝি।
উত্তর: এটি একটি বিশেষ ধরনের গ্রন্থি। এটা সব পুরুষেরই থাকে। নারীদের থাকে না। প্রস্রাবের থলি থেকে যে প্রস্রাবের রাস্তা তৈরি হলো, ঠিক ওই সংযোগস্থলে প্রস্রাবের রাস্তার চারিদিকে একটি গ্রন্থি থাকে। একটি মাংসপিণ্ড থাকে, দেখতে আকারে অনেকটা সুপারির মতো। এই মাংস পিণ্ডটি একটি গ্রন্থি। একেই প্রোস্টেটগ্রন্থি বলা হয়। প্রোস্টেটগ্রস্থি আসলে কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো যখন পুরুষের বয়স আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, তখন শরীরের বাইরের যেমন অনেক পরিবর্তন আসে, চুল পেকে যায়, চামড়া একটু ঢিলা হয়ে যায়, তেমনি শরীরের অভ্যন্তরেও অনেক পরিবর্তন হয়। তার মধ্যে একটি বিশেষ পরিবর্তন হলো পুরুষের প্রোস্টেটগ্রন্থি স্ফীত হওয়া। অর্থাৎ বড় হয়ে যাওয়া। বড় হলেই যে সমস্যা তা কিন্তু নয়।
গ্রন্থটির বাইরে একটু শক্ত আবরণ থাকে, কিন্তু এর মাঝখান দিয়ে প্রস্রাবের রাস্তা নামে। সেটি আবার নরম। তাই বড় যখন হয়, এর ফলাফল পড়ে প্রস্রাবের রাস্তার ওপরে। এটাই হলো মূল সমস্যা। ৫০ বছর পার হলেই প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হতে থাকে।
বড় হওয়া মানেই আবার সমস্যা না। এই সমস্যাগুলো ডাক্তারি ভাষায় আমরা অনেকগুলো ভাগ করি। অল্প সমস্যা, মাঝারি সমস্যা, বেশি সমস্যা। যখন রোগীর ইতিহাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা অল্প সমস্যা দেখি, তখন তাঁকে কিছু উপদেশ দিই। পানি খাওয়ার উপদেশ, প্রস্রাব করার উপদেশ, স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপদেশ দিই- এগুলো দিলে উনি ভালো থাকবেন। আবার যখন মাঝারি ধরনের সমস্যা হয়, তখন কিছু ওষুধপত্র দিলে উনি ভালো থাকবেন। এরপর যদি বেশি সমস্যা হয়, যদি ওষুধে কাজ না করে, তখন আমরা অস্ত্রোপচারের কথা বলি।
প্রশ্ন: প্রোস্টেটগ্রন্থির সমস্যা হওয়ার কারণগুলো কী?
উত্তর: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের একটি পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের ফল গিয়ে পড়ে প্রোস্টেটগ্রন্থির ওপর। প্রোস্টেটগ্রন্থির ভেতরে মেটাবলিজম বলে একটি শব্দ আছে, সেটা বেড়ে যায়, বেড়ে গেলে আস্তে আস্তে প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হতে শুরু করে। এটিই মূলত কারণ। এই কারণে যখন প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হয়ে যায়, তখনই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: সেই ক্ষেত্রে উপসর্গ বা লক্ষণগুলো কী?
উত্তর: একজন স্বাভাবিক পুরুষ প্রস্রাবের চাপ হলে প্রস্রাব করতে যায়। প্রস্রাব করল, শেষ হলো, চলে এলো। এটা হলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার কিছু ব্যত্যয় ঘটে। যেমন সে প্রস্রাবের চাপ হলে আর দেরি করতে পারে না। খুব দ্রুত যেতে হয়। আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলি আর্জেন্সি। কিন্তু গেল ঠিকই, টয়লেটে বসল, সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাব শুরু হলো না। একটু দেরি করে হয়। ডিলে ইনিসিয়েশন বলা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়। আবার শুরু করল ঠিকই, তবে প্রস্রাবের গতি খুব ধীরে ধীরে আসছে। একে আমরা বলি পোর ফ্লো। আবার প্রস্রাব করছে, মাঝে একসময় প্রস্রাব থেমে গেল, আবার শুরু হলো। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ইন্টারমিটেনসি বলা হয়। আবার শেষ করল দেখা যাচ্ছে কিছুটা প্রস্রাব ফোঁটায় ফোঁটায় অনেকক্ষণ যাবৎ পড়ছে। একে বলা হয় টার্মিনাল ড্রিবলিং। আবার শেষ করল তবে তার কাছে মনে হলো এই প্রস্রাবটা পরিষ্কার হলো না। আরো প্রস্রাব রয়ে গেছে। একে আমরা বলি সেন্স অব ইনকমপ্লিট ভয়েলি। এর মানে সে বুঝতে পারে আমার প্রস্রাব পরিষ্কার হয়নি। আরেকটু প্রস্রাব হলে ভালো লাগত। কিন্তু হচ্ছে না। এই উপসর্গগুলো নিয়ে আসলে রোগীরা আসে। এগুলোই সাধারণত উপসর্গ হয় প্রোস্টেটগ্রন্থির কারণে।