গ্রামীণফোন গ্রাহকরা পাবেন বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা

গ্রামীণফোন ও টেলিনর হেলথ গতকাল রোববার বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য নতুন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ‘টনিক’ চালু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং এ দেশের স্বাস্থ্য খাতে টেলিনর হেলথের সহযোগীদের উপস্থিতিতে স্থানীয় একটি হোটেলে ‘টনিক’ উদ্বোধন করা হয়।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সৃষ্টি হয়েছে টনিক। টনিকের লক্ষ্য হলো সুস্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে থাকা।
টনিক সদস্যরা চার ধরনের সুবিধা পাবেন : ‘টনিক জীবন’-এর মাধ্যমে টনিক সদস্যরা এসএমএস, ওয়েব ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিদিনকার সুস্থ জীবনযাপনে ভালো খাওয়া, সক্রিয় থাকা ও মানসিকভাবে সজীব থাকা নিয়ে বিভিন্ন টিপস ও তথ্য। ‘টনিক ডাক্তার’ সদস্যদের সুযোগ করে দেবে সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা ফোনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ডাক্তারের তথ্যবহ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাওয়ার।
‘টনিক ডিসকাউন্ট’ দেশজুড়ে স্বনামধন্য ৫০টিরও বেশি হাসপাতালে, হাসপাতাল ফি-এর ওপর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্টের সুযোগ করে দেবে। ‘টনিক ক্যাশ’-এর মাধ্যমে এর সদস্যরা তিন রাত কিংবা তারও বেশি হাসপাতালে প্রদত্ত বিল থেকে ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হবে।
এ নিয়ে টেলিনর গ্রুপের ইভিপি ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা বিবেক সুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি টেলিনরের দায়বদ্ধতার একটি উদাহরণ হচ্ছে ‘টনিক’। প্রায় দুই বছর গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার কারণে বাংলাদেশের সমাজের সঙ্গে আমার গভীর যোগাযোগ ও বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও স্বাস্থ্য খাতে গভীর দক্ষতার মিশেলে তৈরি এই সেবা নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আরো ইতিবাচক অবদান রাখার ব্যাপারে দারুণ রোমাঞ্চিত।’
গ্রামীণফোনের ৫৬ মিলিয়ন গ্রাহক বিনামূল্যে টনিকের সঙ্গে যুক্ত হতে এবং নিজ নিজ ‘ভালো থাকার মাস্টার প্ল্যান’ অর্জনে এর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে পারবেন।
গ্রামীণফোনের যেকোনো গ্রাহক ইউএসএসডি *৭৮৯# নম্বরে ডায়াল করে অথবা www.mytonic.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে কিংবা ৭৮৯ নম্বরে কল করার মাধ্যমে বিনা খরচে টনিকের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। একজন গ্রাহক শুধু একবার টনিকের সঙ্গে যুক্ত হলেই হবে। পরবর্তী মাসে সদস্যপদ অব্যাহত রাখতে গ্রাহককে অবশ্যই তার গ্রামীণফোন সিমের মাধ্যমে ফোন কল, এসএমএস অথবা ডাটা প্যাকেজ ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহকরা বিনামূল্যে ‘টনিক জীবন’, ‘টনিক ডিসকাউন্ট’ ও ‘টনিক ক্যাশ’ সুবিধা পাবেন। শুধুমাত্র ‘টনিক ডাক্তার’ সেবা নেওয়ার জন্য কল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটের খরচ পড়বে ভ্যাট ও অন্যান্য কর ছাড়া ৫ টাকা।
টেলিনর গ্রুপের স্বাস্থ্যভিত্তিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান টেলিনর হেলথ নরওয়েতে নিবন্ধিত। এটি টনিক এবং এর সার্বিক কর্মকাণ্ডের জন্য চিকিৎসা সম্পর্কিত সর্বোচ্চ মান অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে নিজস্ব ক্লিনিক্যাল টিম। এ টিমের দায়িত্বে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উঠতি বাজারে ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা। টেলিনর হেলথের স্বাস্থ্যবিষয়ক সব লেখা শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান বুপা ও মায়ো ক্লিনিক থেকে নিয়ে থাকে।
এ ছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে পৃথক মেডিকেল উপদেষ্টা প্যানেল। এই প্যানেলে রয়েছেন দেশের প্রখ্যাত সব চিকিৎসকরা। এঁদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মালিক, জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান এবং অধ্যাপক আজাদ খান।
দায়বদ্ধতার প্রতি সঙ্গতি রেখে ও ‘সমাজের ক্ষমতায়ন’ নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টেলিনর গ্রুপ টনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বেরও ঘোষণা দিয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এ অংশীদারত্বের ঘোষণা দেন।
টনিক নিয়ে টেলিনর হেলথের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিদ রহমান বলেন, ‘শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মতো সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য রকমের অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এর সব বয়সের মানুষের জন্য সুস্থ জীবন ও ভালো থাকা নিয়ে নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সামলে উঠেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার আমাদের নির্ভরযোগ্য মনে করেছে এ জন্য আমরা সম্মানিত ও একই সঙ্গে বিনীত বোধ করছি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এক্ষেত্রে আমাদের ছোট্ট ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আমরা উন্মুখ হয়ে আছি।’
সরকারি প্রতিনিধি ও টেলিনর গ্রুপের নির্বাহীরা ছাড়াও দুইশোর বেশি আমন্ত্রিত অতিথি রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে টনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি, দূতাবাস ও উন্নয়ন সহযোগী কর্মকর্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদাররা উপস্থিত ছিলেন। টনিকের এ উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশে অভিনব ডিজিটাল সেবার উদ্বোধনই নয়, এ ছাড়া এটা টেলিনর হেলথের প্রথম কোনো সেবার উদ্বোধন। এর লক্ষ্য উচ্চমানসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য, পরামর্শ ও সেবা বিস্তৃতশীল এশিয়ার সব গ্রাহকের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।