শিশুদের মানসিক সুস্থতায় ভাবের আদান প্রদান জরুরি

মানসিক বিকাশ ছাড়া কোনো শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪৩৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. আবিদ হোসেন মোল্লা। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : শিশুদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকার দরকার আছে। সে ক্ষেত্রে মানসিক বিকাশ যাতে সুন্দরভাবে হয়, সেটি সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়?
উত্তর : একটি জিনিস আমি বলি যে আমাদের শিশুর বিকাশকে আমরা বলি ‘ডেভেলপমেন্ট’ (মানসিক বিকাশ) আরেকটি জিনিস হলো শারীরিক বিকাশ যাকে আমরা ‘গ্রোথ’ বলি। আমি তো বাচ্চাদের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করি। আমার কাছে অনেক বাচ্চার বাবা-মা আসে, তাদের কিন্তু একটাই চিন্তা যে, বাচ্চার বৃদ্ধি হচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের ওজন বাড়ছে কি না, উচ্চতা বাড়ছে কি না –এগুলো। কিছু খাচ্ছে না এই ধরনের সমস্যা। কিন্তু খুব কম বাবা-মা আছেন, যারা আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার বাচ্চার মানসিক বিকাশ হচ্ছে কি হচ্ছে না?’ এই মানসিক বিকাশ কিন্তু খুব জরুরি। একটি বাচ্চা খুবই নাদুসনুদুস হয়েছে, কিন্তু তার হয়তো মানসিক বিকাশ হয়নি। তার বুদ্ধি ভালো হয়নি। সে হয়তো ভালোভাবে কথা বলতে পারে না। সে ভালোভাবে মানুষের সাথে মিশতে পারে না। এটা আসলে অনেকখানি নির্ভর করছে পরিবারের সম্পর্কের ওপর।
মানসিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটি দরকার সেটি হলো ভাবের আদান-প্রদান। পরিবারের প্রতিটি মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদান করতে হবে। শুধু তাই না, পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে ভাবের আদান-প্রদান করতে হবে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে যে আমাদের ব্যস্ততাই হোক বা অন্য কারণেই হোক আমরা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছি না। এখন যদি আমরা পাঁচজন বসি, সবার হাতে মোবাইল থাকে, মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। কারো সাথে কারো যোগাযোগ হচ্ছে না। এটি বিরাট অন্তরায়।
আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের ঘরের ভেতর এখন একাকীভাবে থাকার জন্য অনেক জিনিস তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেমন : টেলিভিশন। অনেক চ্যানেল রয়েছে। ওটা যদি শিশুর সামনে থাকে, তবে কী এমন দায় পড়েছে সে আরেকজনের সাথে কথা বলবে? আরেকটি হলো কম্পিউটার। কম্পিউটারে কি সমস্ত খেলাধুলা হচ্ছে, ভিডিও গেম হচ্ছে, মোবাইল ফোনের মধ্যে কত রকমের অ্যাপস দিয়ে ভরে দেওয়া হয়েছে। আইপ্যাড রয়েছে। এই সমস্ত জিনিস দেওয়ার কারণে হয়েছে কি বাচ্চা ভুলে যাচ্ছে আমাকে আরেকজনের সাথে ভাব করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই আদান-প্রদানকে আপনি নিশ্চিত করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আশা করতে পারি না বাচ্চাটার আশাপ্রদভাবে মানসিক বিকাশ হচ্ছে। এর দায়িত্ব পড়ে পরিবারের ওপর।
স্কুল-কলেজ থেকে ফিরে আসার পর কাপড় চোপড় বদলে সে হয়তো বসে আছে টেলিভিশন ছেড়ে দিয়ে। এতে তার কায়িক পরিশ্রম কিন্তু কমে যাচ্ছে। এতে তার মানসিক বিকাশ তো হচ্ছেই না, সে শারীরিকভাবেও আস্তে আস্তে মোটা হয়ে যাচ্ছে। এই যে মোটা হচ্ছে, এর কারণে কী হচ্ছে? তার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সে অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যায়, আরেকটি পাতলা বাচ্চার মতো সে হাঁটতে পারছে না।