ঝুঁকি এড়াতে ভাল কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরামর্শ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/02/10/dse-cse02.jpg)
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থানে পার করল গত সপ্তাহ। লেনদেনের পরিমাণ সপ্তাহটিতে বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। বাজারে মূলধন বেড়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। শীর্ষ দশ লেনদেনের তালিকায় ৮০ ভাগ ছিল দুর্বল কোম্পানির শেয়ার। এ ধরনের দুর্বল কোম্পানির শেয়ার শীর্ষে ওঠে আসা ভালভাবে নেননি পুঁজিবাজারের বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত সপ্তাহে সূচক ছিল উত্থানে। বেড়েছে লেনদেন। মূলধনও বাড়তি। এটা পুঁজিবাজারের জন্য গুড সাইন।
আবু আহমেদ আরও বলেন, দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আগ্রহ গত সপ্তাহে ছিল লক্ষ্য করার মতো। কেন জানি ভাল কোম্পানিগুলো পিছিয়ে পরেছে। এটা ভাল সংবাদ না। দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করাতে অধিকাংশের পুঁজি ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পুঁজির নিরাপত্তার স্বার্থে ঝুঁকি এড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
ঝুঁকি এড়াতে ভাল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার ওপরে জোর দিতে হবে জানিয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী এনটিভি অনলাইকে বলেন, বেশি লাভের আশায় অনেকেই দুর্বল কোম্পানির দিকে ঝুঁকছে। এতে শীর্ষে লেনদেনে দুর্বল কোম্পানি স্থান পাচ্ছে। শাকিল রিজভী আরও বলেন, মুনাফার লোভে যারা দুর্বল কোম্পানির দিকে যাচ্ছে, তাদের অনেকেই আগামীতে ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন। এটা মাথায় রাখতে হবে। তাই বিনিয়োগ ঝুঁকি এড়াতে বুঝে শুনে, বিশ্লেষণ করে ভাল কোম্পানির বিনিয়োগে জোর বেশি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেক ভাল কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালু ও তার আশপাশে রয়েছে। সেইসব কোম্পানিতে বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করলে ভাল এটা কিছু পেতে পারেন।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) ডিএসই সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। তবে আগের সপ্তাহ থেকে আলোচিত সপ্তাহে লেনদেন পরিমাণ বেড়েছে ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাজারে মূলধন পরিমাণ বেড়েছে দুই দশমিক ১৭ শতাংশ। সপ্তাহটিতে ৮৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। মোট লেনদেনের সাড়ে ২৩ শতাংশই ১০টি কোম্পানির দখলে।
গেল সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮০ শতাংশ লেনদেন শীর্ষ ১০টি কোম্পানির দখলে রয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। এদের মধ্যে আটটির শেয়ার দর বাড়লেও কমেছে দুইটির শেয়ার দর। গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার ১০টি কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই ১০টি কোম্পানি লেনদেন করেছে এক হাজার ৯৮৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরির ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ২৪৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৯২ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এ ছাড়া ফু-ওয়াং ফুডের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৪৬ কোটি ৩৪ শতাংশ, বিডি থাইয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা, খুলনা প্রিন্টিংয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২০২ কোটি ২৮ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৮৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, অলিম্পিক এক্সেসরিজের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৭৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ফরচুন সুজের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৭৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিংয়ের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ইভেন্স টেক্সটাইলসের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৫০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৭ কোটি ৪ লাখ টাকায়।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে আট হাজার ৪৭৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৫৮৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৯১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৪০টির, দর কমেছে ৩৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১৩টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫৯ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৭৩ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৮৭ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ২১ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৩৮ দশমিক ২২ পয়েন্টে।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১২ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১২ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবারের ডিএসইর পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।