আইপিএলেও জাত চেনালেন মুস্তাফিজ

ক্রিস গেইল, বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স, শেন ওয়াটসন। প্রতিপক্ষ দলে যেকোনো একজন থাকলেই হাঁটু কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় বোলারদের। সেখানে এই চারজন যদি একই দলে থাকেন, তাহলে তো সেটা বোলারদের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মতোই। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিপক্ষে আইপিএলের অভিষেক ম্যাচে এই দুঃস্বপ্নের ভীতি নিয়েই মাঠে নামতে হয়েছিল মুস্তাফিজুর রহমানকে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলারদের জন্য সত্যিই বিভীষিকায় পরিণত হয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স-কোহলি। তবে অন্যরা নাজেহাল হয়ে গেলেও মুস্তাফিজ যে সত্যিই অন্য ধাতুতে গড়া, তা আবারও প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার। বোলারদের দুঃস্বপ্নের রাতে নিজের জাতটা ঠিকই চেনালেন এই তরুণ ক্রিকেটার।
ক্রিস গেইলের সামনে অবশ্য পড়তে হয়নি মুস্তাফিজকে। দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই মারমুখী ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বল করতে এসে মুস্তাফিজকে পড়তে হয় দারুণ ফর্মে থাকা কোহলি ও ডি ভিলিয়ার্সের সামনে। এই ওভারে তাঁরা নিতে পারেন মাত্র ৪ রান। প্রথম তিন ওভারে ব্যাঙ্গালোরের সংগ্রহ ছিল ১২ রান। চতুর্থ ওভার শেষেই বোলারদের ওপর চড়াও হন কোহলি-ডি ভিলিয়ার্স। আশিস নেহরা ও ভুবনেশ্বর কুমারের করা চতুর্থ ও পঞ্চম ওভার থেকে আসে ১৫ ও ১৬ রান। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বল করতে এসে আবারও ব্যাটসম্যানদের চমকে দেন মুস্তাফিজ। এই ওভার থেকে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সরা নিতে পারেন মাত্র ৬ রান। দুই ওভারের প্রথম স্পেলে মুস্তাফিজ দিয়েছেন মাত্র ১০ রান।
মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিং দেখে ডেথ ওভারের জন্যই তাঁর বাকি দুটি ওভার জমিয়ে রেখেছিলেন সানরাইজার্সের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ১৫৭ রানের জুটি গড়ে রানের সর্বনাশ যা করার করেই দিয়েছেন কোহলি-ডি ভিলিয়ার্স। ১৬তম ওভারে কোহলিকে আউট করতে পারলেও স্বস্তি মেলেনি বোলারদের। ১৭তম ওভারের শেষ তিন বলে তিনটি ছয় মেরে আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শেন ওয়াটসন। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি মুস্তাফিজের জাদুকরী বোলিংয়ের জন্য। ১৮তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেই বাজিমাত করেছেন এই বাঁহাতি পেসার। টানা দুই বলে আউট করেছেন ডি ভিলিয়ার্স ও ওয়াটসনকে। এই ওভার থেকে এসেছিল মাত্র ৩ রান। মুস্তাফিজ রানের গতি কমিয়ে দিলেও ভুবনেশ্বর কুমারের করা ১৯তম ওভারে ২৮ রান নিয়ে ফেলেন সরফরাজ খান ও কেদার যাদব। নিজের ও ইনিংসের শেষ ওভারে বল করতে এসে মুস্তাফিজ দিয়েছেন ১৩ রান।
ব্যাঙ্গালোরের ২২৭ রানের পাহাড়ের মধ্যে মুস্তাফিজ দিয়েছেন মাত্র ২৬ রান। নিয়েছেন দুটি উইকেট। হায়দরাবাদের অন্য বোলারদের করা ১৬ ওভার থেকেই কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সরা নিয়েছেন ২০১ রান। অভিজ্ঞ পেসার আশিস নেহরা ২.১ ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ইনজুরি নিয়ে। চার ওভার বল করে ভুবনেশ্বর, মোইসেস এনরিকে ও কর্ন শর্মা দিয়েছেন ৫৫, ৪১ ও ৫৭ রান। অন্যদের বলে যেখানে ব্যাঙ্গালোরের ব্যাটসম্যানরা চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন, সেখানে মুস্তাফিজের ২৪টি বলে মারতে পেরেছেন মাত্র দুটি চার ও একটি ছয়।
রানপাহাড়ে চাপা পড়ে দল হেরে গেলেও মুস্তাফিজ ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন আইপিএল অভিষেকে। আর হায়দরাবাদের আগামী ম্যাচগুলোতেও যে তাঁর দিকে সবার উৎসুক দৃষ্টি থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।