লঙ্কা অভিযান দিয়ে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ

মার্কিন মুলুকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানকার বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম ফকনারের একটা চমৎকার উক্তি টেনে নিলে মন্দ হয় না। কারণ, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার লড়াই সামনে এলে এই উক্তিটি এখন প্রাসঙ্গিক। ফকনার বলেছিলেন— ‘অতীত কখনও মরে না। এটা এমনকি অতীতই নয়!’
বাঘ ও সিংহের সম্মুখ সমরে অবধারিতভাবেই উঠে আসে অতীত। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচগুলো স্রেফ খেলাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। নাগিন ড্যান্স থেকে টাইমড আউট—দুটি ঘটনায় বেড়েছে উত্তাপ।
উত্তাপ ও উত্তেজনা নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আগামীকাল শনিবার (৮ জুন) পরস্পর মোকাবিলা করবে দল দুটি। লড়াই শুরু বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৬টায়।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হলেও শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ম্যাচ। তাদের জন্য ম্যাচটি বিশ্বকাপে টিকে থাকারও। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে প্রথম ম্যাচ হারায় চাপে আছে দলটি। বাংলাদেশ নির্ভার, তা বলা যাবে না। সাম্প্রতিক অফফর্ম, আরও ছোট করে আনলে গত একমাসে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের চেয়ে গড়পড়তা খুব কম দলই বোধহয় খেলেছে।
ক্রিকেট গোল বলের খেলা। বলা হয়ে থাকে, চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তার খেলা। সর্বকালের অন্যতম সেরা হলিউড মুভি ‘দ্য গডফাদার।’ তাতে বিখ্যাত অভিনেতা আল পাচিনোকে বলা তার পারিবারিক বন্ধুর একটি সংলাপ— ‘আমরা তোমাকে নিয়ে গর্ব করতাম। তুমি আমাদের হিরো ছিলে।’
অতীত উঠে আসে এখানে! বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের বেলায়ও কি একই সংলাপ প্রযোজ্য নয়? তারা তো ভক্তের কাছে হিরোই। কিন্তু, হিরোরা ইদানিং মান রাখতে পারছে কই? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি তাই ভীষণ জরুরি। বিশ্বকাপে একটা দারুণ শুরুর জন্য, সমালোচনাকে পেছনে ফেলার জন্য। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটতে পারে।
মঞ্চ যখন বিশ্বকাপের, বাংলাদেশ অনুপ্রেরণা নিতেই পারে। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে লঙ্কানদের বিপক্ষে শেষ হাসি হেসেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরাই। ফরম্যাট বদলালেও মঞ্চ তো বিশ্বকাপই। দুদলের মুখোমুখি লড়াই অবশ্য কথা বলবে লঙ্কান লায়নদের হয়ে। মুখোমুখি দেখায় ১৬টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা জিতেছে ১১টি, বাংলাদেশ পাঁচটি। চলতি বছরে শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল লঙ্কানরা।
ডালাসের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই মাঠে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ম্যাচে দুই ইনিংসেই প্রায় ২০০ ছুঁই ছুঁই রান হয়েছে। ক্রমাগত ব্যর্থ বাংলার ব্যাটারদের জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। ক্রিকেট মাঠে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচ মানে অহংয়ের লড়াইয়ে পরিণত হওয়া, ব্যাপারটি যদি জাগাতে পারে ব্যাটারদের ঘুম! বোলিংয়ে সাকিব আল হাসান দাঁড়িয়ে ৫০ উইকেট নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৪৭ উইকেট তারই।
ম্যাচের আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যাচটিতে ভিন্নতা দেখছি না। অবশ্যই, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমরা সবাই সেটি জানি। বেশি চিন্তা করার চেয়ে জরুরি মাঠে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।’

শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কোচ থিলান কান্দাম্বি বলেন, ‘আমার মনে হয় সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আমরা ম্যাচ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। ম্যাচে একটু মোমেন্টাম পেলে তা কাজে লাগানোর বিকল্প নেই।’
সাকিবও একাধিকবার একই কথা বলেছেন। টি-টোয়েন্টি মোমেন্টামের খেলা। একটি মুহূর্ত, বদলে দিতে পারে গতিপথ। সেই পথ ধরে জয়ের বন্দরে পৌঁছানোটাই মূল চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ স্কোয়াড :
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলি অনিক, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, শেখ মেহেদি হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব।