মহারাজের রেকর্ডগড়া বোলিংয়ে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বোলিং ইউনিটের কাণ্ডারি কাগিসো রাবাদা। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শুরু হওয়া ওয়ানডে সিরিজেও রাবাদাকে ঘিরেই আশা দেখছিল প্রোটিয়া সমর্থকরা। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে দুঃসংবাদ শুনতে হয় তাদের। চোটের কারণে ছিটকে যান রাবাদা। ম্যাচে অবশ্য রাবাদার অভাব অনুভব করতে দেননি কেশব মহারাজ। তার স্পিনবিষে নীল করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৯৮ রানের বড় জয়ে সিরিজ শুরু করল প্রোটিয়ারা।
আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) কেয়ার্নসে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯৬ রানের পুঁজি দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে ৪০.৫ ওভারে সবগুলো উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রোটিয়াদের এই জয়ের নায়ক স্পিনার কেশব মহারাজ। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের দুঃস্বপ্ন হয়ে আসেন তিনি। ৩৩ রান খরচে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি।
এতে নাম লিখিয়েছেন নতুন এক রেকর্ডে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মহারাজের প্রথম ফাইফার এটা। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট নেওয়া বোলার তিনি।
আর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট নেওয়া চতুর্থ স্পিনার তিনি। ১৯৯১ সালে প্রথমবার এই কীর্তি গড়েছিলেন ভারতের রভি শাস্ত্রি (৫/১৫)। এর পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয়বার এই কীর্তি গড়েন পাকিস্তানের স্পিনার সাকলায়েন মুশতাক (২৯/৫)। সেই বছরই তৃতীয় বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জিমি অ্যাডামস (৩৭/৫)। লম্বা সময় পরে সেই কীর্তি গড়লেন মহারাজ।
রান তাড়ায় নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও ভালো হয়েছিল। ৬০ রান আসে ট্রাভিস হেড আর মিচেল মার্শের উদ্বোধনী জুটি থেকে। ২৪ বলে ২৭ রানে হেড ফিরলে ভাঙ্গে সেই জুটি। এরপর কেশব মহারাজের স্পিন ঘূর্ণিতে নাজেহাল হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন। প্রোটিয়া স্পিনারের কোনো জবাবই খুঁজে পাচ্ছিল না অসিরা। মার্নাস লাবুশেন, ক্যামেরুন গ্রিন, জস ইংলিশ, অ্যালেক্স ক্যারিরা যাওয়া-আসার লাইন ধরে। মিডল অর্ডারের পাঁচ ব্যাটারের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। সবগুলো উইকেট তুলে নেন মহারাজ।
লাবুশেনকে দিয়ে শুরু করা মাহারাজ শেষ করেন অ্যারন হার্ডিকে বোল্ড করে। হার্ডিকে ফেরানোর মধ্য দিয়ে ফাইফার তুলে নেন এই প্রোটিয়া স্পিনার। পাঁচ ওভার শেষে মহারাজের বোলিং বিশ্লেষণ ছিল, ৫-১-১৩-৫। ১০ ওভারের স্পেল শেষ করেন ৩৩ রানে।
বাকিদের যাওয়া-আসার ভীরে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে যাচ্ছিলেন ওপেনার মার্শ। শেষদিকে তিনি জুটি গড়েছিলেন বেন ডোয়ার্শিসের সঙ্গে। এই দুইজনকে ফিরিয়ে অসিদের লড়াই শেষ করে দেন নান্দ্রে বার্গার। ৫২ বলে ৩৩ রান করা ডোয়ার্শিসকে ফেরানোর পরে ৯৬ বলে ৮৮ রান করা মার্শকেও রিকেল্টনের ক্যাচ বানান বার্গার। অসিরা থামে ১৯৮ রানে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দুই ওপেনার এইডেন মার্করাম ও রায়ান রিকেল্টন। ৪৩ বলে ৩৩ রানে রিকেল্টন ফিরলে ভাঙ্গে সেই জুটি। এরপর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে এগুতে থাকেন মার্করাম। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ৮১ বলে ৮২ রান করে সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন তিনি।
হাফসেঞ্চুরি পেরিয়ে বাভুমাও আর বেশি দূর যেদে পারেননি। ৭৪ বলে ৬৫ রানে থামে তার ইনিংস। এরপর হাফসেঞ্চুরি পান ম্যাথিউ ব্রিটস্কও। ৫৬ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। চার হাফসেঞ্চুরি আর শেষদিকে উইয়ান মুল্ডারের ২৬ বলে ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজি দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৯৬/৮ (মার্করাম ৮২, রিকেল্টন ৩৩, বাভুমা ৬৫, ব্রিটস্ক ৫৭, স্টাবস ০, ব্রেভিস ৬, মুল্ডার ৩১, মহারাজ ১৩, সুব্রায়েন ১, বার্গার ১; হ্যাজেলউড ৮-১-৩৬-০, ডোয়ার্শিস ৯-০-৫৩-২, এলিস ১০-০-৫৪-০, হার্ডি ২-০-২০-০, হেড ৯-০-৫৭-৪, জাম্পা ১০-০-৫৮-১, লাবুশেন ২-০-১৪-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৪০.৫ ওভারে ১৯৮/১০ (হেড ২৭, মার্শ ৮৮, লাবুশেন ১, গ্রিন ৩, ইংলিস ৫, ক্যারি ০, হার্ডি ৪, ডোয়ার্শিস ৩৩, এলিস ১৪, জাম্পা ১১, হ্যাজেলউড ১*; বার্গার ৮-১-৫৪-২, এনগিডি ৪.৫-০-২৮-২, সুব্রায়েন ১০-০-৪৬-১, মাহারাজ ১০-১-৩৩-৫, মার্করাম ৮-০-৩৫-০)
ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৯৮ রানে জয়ী