তরুণদের মাঠমুখী করার পালসগুলো আমি জানি : আসিফ আকবর

দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে রীতিমতো ঝড় বইছে বিসিবি নির্বাচন নিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চেয়ারে বসতে দৌড়ঝাঁপ কম হচ্ছে না। এসবের মাঝেই একপ্রকার বিনা লড়াইয়ে বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন আসিফ আকবর। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আসিফের আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি একটা সময় প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে খেলেছেন। গানের মঞ্চ থেকে খেলার মাঠে আসা আসিফ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জহিরুল কাইউম ফিরোজ।
এনটিভি অনলাইন : প্রথমে অভিনন্দন। আসিফ আকবর নিজে ক্রিকেট খেলেছেন, এদেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশ দলের বলতে গেলে থিম সং ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ গানটা…
আসিফ আকবর : বাংলাদেশ ক্রিকেটের অফিসিয়াল থিম সং ছিল, ‘বেশ বেশ বেশ সাবাশ বাংলাদেশ।’ এটা তৎকালীন বিসিবির হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডের প্রধান প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর উদ্যোগেই হয়েছে। গানটি লিখেছেন অভিনেতা ও নাট্যনির্মাতা সোহেল আরমান। সুর ও সঙ্গীত করেছেন ইবরার টিপু। বেসিক্যালি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম থিম সং হিসেবে লঞ্চ করা গান—বেশ বেশ বেশ, সাবাশ বাংলাদেশ। আমি গানের মানুষ। ক্রিকেটের সঙ্গে একটা মিনিমাম অংশগ্রহণের জন্যই বাংলাদেশ গানটা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। দেশের মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমি সাবেক ক্রিকেটার, বর্তমান গায়ক—দুটোর কম্বিনেশনে গানটা করা।
এনটিভি অনলাইন : খেলা ও গানের পর এখন সরাসরি যুক্ত হলেন সাংগঠনিক পর্যায়ে। কেমন লাগছে?
আসিফ আকবর : অনুভূতি ভালো। সাংগঠনিক কাজে জড়িত হওয়ার ফলাফল আশা করছি আমরা খুব দ্রুততম সময়ে দেখাতে পারব। দীর্ঘদিনের খেলার মাঠের অভিজ্ঞতা যেটা আছে, সেটা নিয়ে একটা প্ল্যানও করা আছে আমাদের। যখন বোর্ডের মিটিং হবে, বোর্ডের দায়িত্বগুলো ভাগ হবে, সিদ্ধান্ত হবে, তখন আমরা বুঝতে পারব কে কোন পর্যায়ে কাজ করব। অবশ্যই যেহেতু আমি বিভাগীয় কাউন্সিলর, আমার বিভাগের ১১ জেলার প্রায়োরিটি, আমার কুমিল্লা জেলার প্রয়োরিটি থাকবে।
এনটিভি অনলাইন : কখন মনে হলো, দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করা যায়। কেন মনে হলো?
আসিফ আকবর : ক্রিকেটের জন্য আসলে কাজ করার কিছু নাই। ক্রিকেট ২০০-৩০০ বছর ধরে খেলা হচ্ছে। শুধু আমাদের অবকাঠামো যেটা ছিল, সেখানে অনেক গলদ ছিল। আমাদের খেলাধুলা নিয়মিত হতো না।
এনটিভি অনলাইন : দায়িত্ব পাওয়ার পর দেশের ক্রিকেটের কোন কোন জায়গাগুলোতে সবার আগে গুরুত্ব দেবেন?
আসিফ আকবর : বাংলাদেশে যে সমসাময়িক সমস্যা, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, এর মূল কারণ হচ্ছে মাঠমুখী না হওয়া। এই মাঠমুখী না হওয়ার ফলে আমাদের বাচ্চারা অন্য লাইনে হাঁটছে। সেক্ষেত্রে তাদের একটা গাইডলাইন দিলে সুবিধা হবে। কীভাবে তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারি বা তারা কী চায়, এই পালসগুলি আমি জানি। এইজ লেভেলে আমরা যদি কাজগুলো শুরু করি, প্রত্যেকটা জেলা ক্রীড়া সংস্থার লিগগুলো যদি নিয়মিত হয়, সেকেন্ড ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন, কোয়ালিফাইং রাউন্ড করে যদি খেলার মধ্যে রাখা যায়, আর কোনো চিন্তা আসবে না। অটোমেটিক পাইপলাইনে প্লেয়ার চলে আসবে।
এনটিভি অনলাইন : বিসিবির এই নির্বাচন নিয়ে নানা কথা আছে। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, ভোটার টানা—এসব নিয়ে কী বলবেন?
আসিফ আকবর : নির্বাচন একটা যুদ্ধ। এখানে পাল্টাপাল্টি কথা হবে। এখানে নানা মত প্রকাশ হবে, বিরোধিতা হবে। নানারকম কথা হবে, আলোচনা-সমালোচনা হবে। এটাই নির্বাচনের সিস্টেম। কিন্তু প্রক্রিয়া অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা, মনোনয়নপত্র কেনা, প্রত্যাহার সবই ঠিকঠাক হয়েছে। তারপরে অপশন ছিল, তখন যদি সন্দেহ হতো যে এখানে কিছু হচ্ছে, তখন মানা যেত।
এনটিভি অনলাইন : সেই জায়গা থেকে আপনি একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত…
আসিফ আকবর : আমি তো এখানে কোনো দল বা গ্রুপের নমিনেশন নিয়ে আসিনি। আমি আমার কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের অনুরোধে কাউন্সিলর হয়েছি। কাউন্সির হওয়ার পরে আমার জেলার যারা সংগঠক ছিলেন, আমাদের যারা সিনিয়র ক্রিকেটার, জুনিয়র ক্রিকেটার, কোচ ও একাডেমির যারা পরিচালক ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে যাদের সঙ্গে খেলেছি, তারা আমাকে বলল যদি কাউন্সিলর হওয়া যায়, ডিরেক্টর কেন নয়? তখন আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তাকে আমি ফোন দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, আসিফ ভাই আপনি প্লেয়ার। আমিও প্লেয়ার। আপনার সঙ্গে আমি নির্বাচন করি, এটা কেমন দেখা যায়। আমি কাল সকালে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেব। এখন তিনি যদি নির্বাচন করতেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ ছিল। এটাকে আসলে কোনোভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বলা যাবে না। এর জন্য নতুন একটা ভাষা খোঁজা দরকার। বলতে হবে আমি সমর্থন পেয়েছি। আমার কাউন্সিলর যারা ১১ জন ছিলেন, তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি।
এনটিভি অনলাইন : তামিম ইকবাল একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমে বোর্ডে আসতে চেয়েছেন, এরপর অনেক কাদা ছোড়াছুড়ির পর সরে দাঁড়িয়েছেন। দেশের ক্রিকেটে তামিমের একটা ইমেজ আছে। সবমিলিয়ে এই ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
আসিফ আকবর : তামিম ইকবাল আমাদের দেশের সেরা ওপেনার। তার পরিবারের বিরাট অবদান আছে, তারও অবদান আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তামিম এই ইলেকশনটা করছে না। তামিমের ইমেজ আছে, থাকবে। তামিম এখনও ফুরিয়ে যায়নি। যেটা হয়েছে, একটা নির্বাচন মাত্র। যেহেতু তারা আগে আগে সরে গেছে, নির্বাচনে আসেনি। যদি তারা নির্বাচনে এসে পরবর্তীতে গাফিলতি দেখত, যে নির্বাচনটা সঠিকভাবে হচ্ছে না, তখন আমরা মানতাম। এখন তো এটা ওয়ান সাইডেড হয়ে গেল। তারা নাম প্রত্যাহার করার ফলে কোনো আলোচনা থাকলো না। এখানে আমি কোনো ইনফ্লুয়েন্স দেখি না। এটা হচ্ছে বোঝার ভুল, বোঝানোর ভুল। তামিমের বয়সও বেশি না। আশা করি তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় ভূমিকা রাখবে। কাদা ছোড়াছুড়ি বা এসব নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। তামিম একবারই আসে, বারবার আসে না।
এনটিভি অনলাইন : এনটিভি অনলাইনকে সময় দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।
আসিফ আকবর : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।