পূজার ছুটিতে
শতবর্ষের পুরোনো পূজায়

পূজা অর্চনা আর দেব-দেবীদের আরাধনায় শত বছরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হৃদয়ের মণিকোঠায় আসীন করে নিয়েছে কুলাউড়ার কাদিপুরে শিববাড়ি মন্দিরটি। নয়নাভিরাম নানা কারুকার্যময় শৈল্পিক আঁচড় আর চারপাশের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন কাড়ে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হিন্দু ধর্মের লোকজন দুর্গাপূজা এলেই ওখানে আসেন।
দুর্গাপূজা ছাড়াও বছরজুড়ে ভক্তদের মানত আর ওখানে আসা যাওয়ার দৃশ্য লক্ষণীয়। নবমীর দিন সকাল হতেই পুরো দিন দেবীর তুষ্টির জন্য প্রাপ্ত উপঢৌকন হিসেবে ভক্তদের কাছ থেকে আসা পশু পাখি (কবুতর, হাঁস, পাঁঠা ও মহিষ) মন্দির সেবায়েতদের সংগ্রহের দৃশ্য নতুন আগুন্তুকদের অভিভূত করে। দূরদূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা ভোগ নৈবদ্য, ফুল ও বিল্বপত্র নিয়ে এখানে পূজা অর্চনা করতে আসেন।
ইতিহাস
পূজারির বংশের কোনো এক বংশধর তাদের দীঘির পাড়ে বেল গাছের নিচে বসে নিয়মিত শিবের সাধনা করতেন। কিন্তু তখন কোনো শিবলিঙ্গ এ বাড়িতে ছিল না। পরবর্তী সময়ে পুলক সোমের তপস্যার ফসল হিসেবে ১৩০৮ সালে শিবলিঙ্গটি পাওয়া যায়। লিঙ্গটি পাওয়ার পর উপযুক্ত স্থান না থাকায় পুরোনো মন্দিরটি সংস্কার করে ওই মন্দিরেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়। শিবলিঙ্গটি পাওয়ার গল্প ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন থেকেই আজ পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ ভক্তরা ওখানে শিবলিঙ্গটি দর্শন করতে আসেন। শিলাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিদিনই মন্দিরে চলতে থাকে পূজা অর্চনা, ভোগ, আলতি, আরতি। ফুল, ফল, বিল্বপত্র, ভোগ, নৈবদ্য, ধূপ, দীপ ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়মিত চলে দেব দেবীর আরাধনা। জানা যায়, বড়বাড়ির (শিববাড়ির) লোকেরা ছিলেন জমিদার পরিবারের। তাদের একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জমিদারি থাকলেও জমিদারি শাসন উচ্ছেদের পর তাদেরও অন্য জমিদার পরিবারের মতো পড়তে হয় চরম আর্থিক দৈনতায়। ফলে পূর্বেও বনেদী পূজা অর্চনার আকাশছোঁয়া জৌলুস হ্রাস পেতে থাকে। তবে এর প্রভাবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে মোটেই ঘাটতি পড়েনি। ধর্মীয় বিধিবিধান লঙ্ঘন না করেই পূজা-পার্বণ অব্যাহত ছিল। গত একদশক থেকে মন্দিরটি আগের জৌলুস ফিরে এসেছে।
যা দেখবেন
প্রাচীন কারুকার্যময় মন্দিরের স্হাপত্য শৈলী এক অপরূপ নিদর্শন কাদিপুর শিববাড়ি। মন্দিরের পথে প্রবেশের সঙ্গে দেখা পাবেন মন্দিরের চূড়ার। মন্দিরের প্রবেশে পথে দেখা পাবেন ভৈরবের মন্দিরের। সেখান থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলে দেখা পাবেন মূল মন্দিরের। সেখানে দর্শন পাবেন দেবী দুর্গার। তা ছাড়া শিব, মনসা, বালি , ভৈরব, শীতলা , চামুণ্ডা, শনিসহ দেব দেবীর মন্দির বিদ্যমান এখানে ।
কীভাবে যাওয়া যায়
ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে নামতে হবে কুলাউরা শহরে । অথবা সিলেট শহর থেকে সরাসরি যেতে পারবেন কুলাউরাতে। ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। সেখান থেকে থেকে সিএনজি/ রিকশাযোগে শিববাড়ি যাওয়া যায়। ভাড়ার হার- ১৫-২০ টাকা (জনপ্রতি সিএনজিচালিত অটো রিকশাযোগে)।