ঘোরাঘুরি
সৈয়দ শামসুল হকের ভিটাতে

উত্তর জনপদের একটি জেলা কুড়িগ্রাম। এটি রংপুর বিভাগের একটি জেলা। ঢাকা থেকে সড়কপথে কুড়িগ্রাম জেলার দূরত্ব প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। ভারতের সঙ্গে তিনটি রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ফলকুমার, নীলকমল, গঙ্গাধর, শিয়ালদহ, কালজানী, বোয়ালমারী, ধরনী, হলহলিয়া, সোনাভরি, জিঞ্জিরাম, জালছিড়া প্রভৃতি নদনদী। এখানেই জন্ম নিয়েছেন লেখক সৈয়দ শামসুল হক।
সৈয়দ শামসুল হক কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সব শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাঁকে 'সব্যসাচী লেখক' বলা হয়। তাঁর লেখকজীবন ছিল ৬২ বছরব্যাপী বিস্তৃত। শামসুল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। ১৯২৮ সালে তৎকালীন এমএলএ কাজী এমদাদুল হকের আমন্ত্রণে তাঁর বাবা ডা. সৈয়দ সিদ্দিক হোসাইন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে কুড়িগ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। সৈয়দ শামসুল হক নবম শ্রেণি পর্যন্ত কুড়িগ্রাম রিভারভিউ হাই স্কুলে পড়ালেখা করে ঢাকায় চলে যান। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন। এ ছাড়া বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক ও ২০০০ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
যা দেখবেন
কুড়িগ্রাম শহর থেকে স্বল্প দূরত্বে দেখা পাবেন কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলের। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে হেঁটে বেড়াতে পারবেন।
এই স্কুলে লেখক ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। সৈয়দ শামসুল হকের বাবার ইচ্ছা ছিল, তাঁকে তিনি ডাক্তারি পড়াবেন। বাবার ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বোম্বে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বছরখানেকের বেশি সময় এক সিনেমা প্রডাকশন হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরে স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ সালে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৪৯-৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরে ব্যক্তিগত খাতায় ২০০টির মতো কবিতা রচনা করেন। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে, ফজলে লোহানী সম্পাদিত 'অগত্যা' পত্রিকায়। সেখানে 'উদয়াস্ত' নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে এখানেই শায়িত আছেন আমাদের সবার প্রিয় লেখক সৈয়দ শামসুল হক। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। গ্রামের ছেলে গ্রামেই শুয়ে আছেন গ্রামীণ পরিবেশে। আমরা সেখানে কিছুকাল অপেক্ষা করে গেলাম কুড়িগ্রাম শহরের পুরাতন থানাপাড়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে আমরা পরশ পেলাম সৈয়দ শামসুল হক ছেলেবেলার স্মৃতি।
যাবেন কীভাবে
ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় সড়ক ও রেল উভয় পথেই ভ্রমণ করা যায়। এই রুটে এসি ও নন-এসি উভয় ধরনের বাসই রয়েছে। ভাড়া নেবে ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা।