হিম শীতে মেঘেদের দেশে

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন কার না জাগে, মেঘে গা ভাসানোর ইচ্ছা কার না করে। সব স্বপ্ন ও ইচ্ছা কখনো পূরণ হয় না, কথাটি সত্যি। তবে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও মেঘে গা ভাসানোর ইচ্ছাপূরণ হতে পারে বান্দরবানে।
শীতকাল নাকি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। আর এই হিম শীতেও যদি মেঘেদের দেশে ঘুরতে ইচ্ছা করে, তাহলে আপনাকেই আসতেই হবে ‘বাংলার দার্জিলিং’ নীলগিরিতে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচুতে নীলগিরি পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে আকাশ নিজে এসে ধরা দেবে আপনার হাতে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত নীলগিরি পর্যটন স্পটে হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায়। কখন এসে মেঘ আপনাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে বোঝার অবকাশ নেই। অনেকটা মেঘের দেশে ভেসে বেড়ানোর মতো।
বাংলার ঋতুচক্রের মতোই বিভিন্ন ঋতুতে বান্দরবানের প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষায় নীলগিরির কটেজে বসে মেঘে ভিজতে যেমন মজা, শীতে আবার পেঁজা তুলার মতো মেঘে ভাসার অনুভূতিই অন্য রকম।
এ ছাড়া বছরের সব সময়ই মাথার ওপর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা খেলা করে নীলগিরি পাহাড়ে। অপরূপ সৌন্দর্যের এক নীলাভূমি এই নীলগিরি। আর এই নীলগিরির কারণেই বান্দরবানকে ‘বাংলাদেশের দার্জিলিং’ বলা হয়।
বান্দরবানে অসংখ্য পর্যটন স্পটের মধ্যে অন্যতম এটি। বান্দরবান শহর থেকে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের ৪৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় নীলগিরি পৌঁছাতে। বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ি কিংবা জিপ-মাইক্রোবাসে নীলগিরিতে যাওয়া যায়।
সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নীলগিরি পর্যটন স্পটে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও আছে। আকাশনীলা, মেঘদূত, নীলাতানাসহ বিভিন্ন নামে সাজানো কটেজগুলোর ভাড়াও খুব বেশি নয়। রাত্রিযাপনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায় এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্টও। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে পেট পুরে খাওয়া যায়।
নীলগিরি যেন প্রকৃতির এক অনন্য দান। নীলগিরির চূড়া থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রাকৃতিক আশ্চর্য বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারিও দেখতে পাওয়া যায়।
নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ম্রো উপজাতীয় গ্রাম। নীলগিরির একদম কাছে কাপ্রুপাড়া, আপনি সহজেই পরিদর্শন করে ম্রো আদিবাসী সম্পর্কে জানতে পারবেন। নীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ফলে এখানে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। আপনার যেকোনো প্রয়োজনে সেনাসদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।
পূর্ণিমায় নীলগিরির রাতের সৌন্দর্য করে দেয় বিবস। নিস্তব্ধ পাহাড়ে বিভিন্ন বন্য প্রাণী আর পাখির ডাক আর পাহাড়গুলোর আলো-আঁধারির খেলা দেখে আপনার জীবনকেই যেন রহস্যময় বলে মনে হবে। যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উৎকৃষ্ট স্থান।
নীলগিরি যাওয়ার পথে আপনি দেখে যেতে পারেন বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যময় শৈলপ্রপাত। এখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এখান থেকে কিনে নিতে পারেন আদিবাসীদের হাতের তৈরি নানা পণ্য। এর পরই চোখে পড়বে স্বপ্নচূড়া। স্বপ্নচূড়া থেকেও বান্দরবানের অবাক করা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
নীলগিরির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এখান থেকে চোখে পড়ে বান্দরবানের ওপর দিয়ে বয়ে চলা সর্পিল সাঙ্গু নদী। এখান থেকে মনে হবে সাঙ্গু নদী আপনার খুব কাছে। সাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায়। সাঙ্গুর বুক চিরে বয়ে চলা ছোট ছোট নৌকাগুলোকে দেখলে দূর থেকে মনে হবে স্বপ্নের কোনো ডিঙি বয়ে চলছে সাঙ্গু নদী দিয়ে।
ভিআইপিদের সরাসরি অবতরণের জন্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাডও। তবে সাধারণ দর্শনার্থীদের হেলিপ্যাডে প্রবেশ করা নিষেধ। নীলগিরিতে সৃষ্টি করা হয়েছে ফুলের বাগান, পাহাড়ের ওপরে সুন্দর এই ফুলের বাগানও অবাক করার মতো।
নীলগিরিতে যাওয়ার জন্য বান্দরবান হিলবার্ডের সামনেই রয়েছে নানা ধরনের গাড়ি। আপনার পছন্দের গাড়িটি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন নীলগিরিতে। তবে কটেজ বুকিংয়ের জন্য আগে থেকেই কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।