ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দিতে ন্যাটো রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান

রাশিয়ার আক্রমণ মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করতে জার্মানির দীর্ঘদিনের অস্বীকৃতি প্রত্যাহারের জন্য দেশটি তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য গত সোমবার জার্মান আকাশসীমা এড়িয়ে উড়োজাহাজে করে ইউক্রেনে স্বল্প-পাল্লার ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস আইন প্রণেতাদের আভাস দিয়েছেন—ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার ‘ক্রমবর্ধমান হুমকিমূলক আচরণ’-এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভবত আরও সামরিক সহায়তা এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা সহায়তা প্রদান করা হবে। ইউক্রেন সীমান্তে ক্রেমলিন এক লাখেরও বেশি সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে।
ওয়ালেস বলেন, ‘উদ্বেগের বৈধ ও বাস্তব কারণ’ রয়েছে। রাশিয়া (ইউক্রেনে) আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। যদিও রুশ কর্মকর্তারা তাঁদের এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছেন, তবু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গতকাল বুধবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হুমকির অবস্থা নজিরবিহীন।’
সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ইস্যুতে ইউক্রেন জার্মানির প্রতি ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ গত মাসে অভিযোগ করেন, বার্লিন ন্যাটো সমর্থিত প্রকিউরমেন্ট এজেন্সি থেকে অ্যান্টি-ড্রোন রাইফেল ও অ্যান্টি-স্নাইপার সিস্টেম কেনার বিষয়ে ভেটো দিয়েছে। পদক্ষেপটিকে ‘খুবই অন্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
তবে, ইউক্রেন সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, লিথুয়ানিয়া, ফ্রান্স ও তুরস্কের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র ক্রয় করছে।
ইউক্রেনের কেনাকাটার তালিকায় ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী এবং উড়োজাহাজ বিধ্বংসী সিস্টেম, যুদ্ধের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এবং সাইবার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেন ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে আগ্রহী, যেগুলো একই সঙ্গে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

বাইডেন প্রশাসন গত মাসে ইউক্রেনে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষামূলক সুরক্ষা সহায়তা হিসেবে ২০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে। এবং বুধবার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন—রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলে, ব্যয় বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে নতুন সরবরাহের বিকল্পগুলো বিবেচনা করছে হোয়াইট হাউস। এ ছাড়া রাশিয়া বড় ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে পারে এ আশঙ্কার মধ্যেই মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে আরও ট্যাংক বিধ্বংসী জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র এবং উড়োজাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।
কিন্তু, ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের পশ্চিমা জোটে যোগদান না করার রুশ দাবি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে একমত হলেও, তাদের মধ্যে যে বিষয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে তা হলো—আক্রমণ শুরু হলে রাশিয়ার ওপর কী ধরনের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত হবে।
বর্তমান ও সাবেক পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বলছেন—সামরিক অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে মোটা দাগের সমঝোতা থাকলেও, বিশদ বিবরণসহ এ ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি নেই।