রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে সিআইএ উপপরিচালকের ছেলে নিহত

ইউক্রেনের বিপক্ষে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) এক উপ-পরিচালকের ছেলে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে গত বছর প্রাণও হারিয়েছেন ওই যুবক। সম্প্রতি রাশিয়ান গণমাধ্যম আইস্টোরিসের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, সিআইয়ের উপ-পরিচালক জুলিয়ান গ্যালানের ২১ বছর বয়সী ছেলে মাইকেল আলেকজান্ডার গ্লস। তিনি ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল পূর্ব-ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম থেকে কিয়েভের অন্যতম সহায়তাকারী দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নানাভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।
সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার বসবাসরত একজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সন্তান কীভাবে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলো— এই কাহিনী অবাক করেছে অনেককেই।
রুশ সামাজিকমাধ্যম ‘ভিকেতে’ দেওয়া এক পোস্টে গ্লস নিজেকে বহুত্ববাদী বিশ্বের সমর্থক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমি ঘর ছেড়ে পালিয়েছি, বিশ্ব ঘুরেছি। আমি ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করি। আমি আমার জন্মভূমিকে ভালোবাসি। তিনি তার নিউজ ফিডে ফিলিস্তিনের পতাকাও শেয়ার করতেন।
আইস্টোরিসের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গ্লস ২০২২ সালে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এক হাজার ৫০০ বিদেশির মধ্যে একজন। তবে এ সম্পর্কিত নথি ফাঁস হলে জানা যায়, গ্লস ২০২৩ সালের সেপ্টেস্বরে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে একটি চুক্তিতে সই করেছিলেন।
এক সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যোগদানের তিনমাস পর ডিসেম্বরে তাকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখসারিতে (অ্যাসল্ট ইউনিট) মোতায়েন করা হয়।
গ্লসের এক পরিচিত জানান, ইউক্রেনের কাছে শোলেদার নামক শহরে তাকে এয়ারবর্ন রেজিমেন্টে (যারা প্যারাস্যুট দিয়ে বিমান থেকে নেমে রণক্ষেত্রে লড়াই করেন) তাকে মোতায়ন করা হয়।
গ্লস নিহত হওয়ার পর এক শোকর্বাতায় তার পরিবার জানায়, ‘মহৎ হৃদয়ের অধিকারী গ্লস বীরের মতো লড়তে লড়তে পূর্ব ইউরোপে প্রাণ হারিয়েছেন।’ এই শোকবার্তায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো উল্লেখ ছিল না।
গ্লসের অতীত সম্পর্কে খোঁজ নিলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি লিঙ্গ সমতা ও পরিবেশবাদী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। তিনি বামপন্থি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘রেইনবো ফ্যামিলি’তে সংযুক্ত হয়েছিলেন। এমনকি ২০২৩ সালে তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেলে তাদের সহায়তা করতে সেখানে ছুটে যান এই যুবক।
এ সময় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হলে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন করলে তিনি নিজ দেশের ওপর বেশ রাগান্বিত হন।
গ্লসের এক পরিচিত ব্যক্তি বলেন, তুরস্কে থাকার সময় থেকেই রাশিয়ার যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এই মানবদরদী যুবক। ফিলিস্তিনে মানুষগুলো মরতে দেখে যুক্তরাষ্টের ওপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে তার। এক পর্যায়ে নিজ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চিন্তা করতে থাকেন গ্লস।
বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ভিডিও দেখে প্রভাবিত হয়েই গ্লস এমন চিন্তা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন ওই পরিচিত ব্যক্তি।
আইস্টোরির বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর নেপালি চুক্তিভিত্তিক সৈন্যদের সঙ্গে গ্লসকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা দেখা গেছে। তবে গ্লসের এক পরিচিত জানান, যুদ্ধে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। গ্লস ভেবেছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে গ্লস রাশিয়ায় থাকার সুযোগ পাবে।
রাশিয়ার ভিসা শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই গ্লস সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বলেই তথ্য পাওয়া যায়।
তবে গ্লসের মৃত্যু রহস্য এখনো সমাধান হয়নি। তার এক বন্ধু জানান, গ্লসের পরিবারকে তার মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করে মস্কো। তবে কিভাবে তিনি মারা গেলেন, তার বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। গ্লস ইউক্রেনের সীমানার মধ্যে মারা গিয়েছেন— কেবল এতটুকুই জানানো হয় পরিবারকে।
তাছাড়া গ্লসের পরিবার সম্পর্কে কিংবা তিনি যে যুক্তরাষ্ট্রের এক উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার সন্তান, এই বিষয়টি ক্রেমলিন সরকার জানতো কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সিআইয়ে যোগাযোগ করেছে দ্য গার্ডিয়ান, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।