ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণে গুরুত্ব পেল যে ৬ বিষয়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর অভিষেক ভাষণ দেন। এতে তিনি ছয়টি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘স্বর্ণযুগে’ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একইসঙ্গে ট্রাম্প তার পূর্বসূরির গৃহীত নীতিগুলোর মাধ্যমে দেশটির ‘পতন’ হয়েছে দাবি করে তা থেকে উদ্ধারের ঘোষণা দেন। খবর সিবিএস নিউজের।
ভাষণে প্রেসিডেন্ট অভিবাসন ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তার প্রচারাভিযানে বলে আসা বিষয়গুলো এবং বিচার বিভাগ ও বাইডেন প্রশাসনের প্রতি তার কড়া সমালোচনার পুনরাবৃত্তি করেন।
‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু এখনই’
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকায় জাতীয় ঐক্য ফিরে আসছে এবং আত্মবিশ্বাস ও গর্ব আগের মতো বেড়ে চলেছে। আমরা যত কিছু করি, সবকিছুতেই আমার প্রশাসন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে দৃঢ় সাধনা এবং সাফল্যের জন্য নিরলস কাজ করে যাব। আমরা আমাদের দেশকে ভুলব না, আমরা আমাদের সংবিধানকে ভুলব না এবং আমরা আমাদের ঈশ্বরকেও ভুলব না।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভাষণের শুরুতে বলেন, ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে।’
ট্রাম্প বলেন, তার তত্ত্বাবধানে জাতি বিশ্বজুড়ে বিকশিত হবে এবং আবার সম্মানিত হবে। তিনি আগের মেয়াদের চার বছর থেকে পরিবর্তনের ধারাগুলো সামনে এগিয়ে নেবেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিটি দিন আমি শুধু আমেরিকাকে প্রথমে রাখব।’
প্রেসিডেন্ট তার দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন, বিচার বিভাগকে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তার ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ হলো এমন একটি দেশ তৈরি করা, যা হবে ‘গর্বের, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পতন’ ঠেকাবেন ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পূর্বসূরির নীতির অধীনে জাতির শোচনীয় অবস্থার কথা উল্লেখ করেন। ট্রাম্প মার্কিন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিন্দা করে বলেন, ‘আমেরিকার জনগণকে তাদের বিশ্বাস, তাদের সম্পদ, তাদের গণতন্ত্র এবং প্রকৃতপক্ষে তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতেই আমার এই সাম্প্রতিক নির্বাচন।’
ট্রাম্প বলেন, সরকার জরুরি পরিষেবা সরবরাহ করতে ব্যর্থ। যেমনটি দেখা গেছে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পশ্চিম উত্তর ক্যারোলাইনায় হ্যারিকেন হেলেনে ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি সময়। এরপর ট্রাম্প দক্ষিণ সীমান্তের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে আমেরিকার পতন শেষ।’
ট্রাম্প হত্যাচেষ্টার কথাও স্মরণ করেন
ট্রাম্প গত বছরের ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলারে একটি প্রচার সমাবেশে তাকে হত্যাচেষ্টার বিষয়ও সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ‘একটি কারণে’ তার জীবন রক্ষা পেয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করেছিলেন।’
ট্রাম্প তার হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ হত্যাচেষ্টাকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে পুনরুদ্ধার করার যাত্রা সহজ ছিল না। যারা আমাদের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করতে চায়, তারা আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং প্রকৃতপক্ষে আমার জীবন নেওয়ার চেষ্টা করেছে।’
পরে ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার প্রত্যাশা পূরণে আরও সাহসী হন। তিনি বলেন, ‘অনেক লোক ভেবেছিল, আমার পক্ষে এই জাতীয় ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন অসম্ভব, কিন্তু আপনি আজ দেখছেন, আমি এখানে।’
অভিবাসন, জ্বালানি ও বাণিজ্য
অভিবাসনের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন। তিনি আরও বলেন, তার প্রশাসন ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি পুনঃপ্রবর্তন করবেন।
ট্রাম্প বলেন, অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে তিনি মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে সৈন্য পাঠাবেন এবং ড্রাগ কার্টেলকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করবেন। তিনি বলেন, ‘কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমাদের দেশকে হুমকি ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করার চেয়ে আমার আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেই এবং আমি ঠিক এটাই করতে যাচ্ছি।’
ট্রাম্প বলেন, তিনি তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করতে এবং ব্যয় কমানোর নির্দেশ দেবেন। তিনি একটি ‘জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট মার্কিন নাগরিকদের সমৃদ্ধ করাতে বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর আরোপে তার পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তিনি সরকারি সেন্সরশিপ বন্ধের লক্ষ্যে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন।
ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসনের অধীনে ফেডারেল সরকারের অবস্থান হবে দুটি লিঙ্গের পক্ষে—পুরুষ ও নারী। মার্কিন পরিষেবা সদস্যদের মধ্যে যারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আপত্তির কারণে সামরিক বাহিনী থেকে অপসারিত হয়েছিল, তাদের পুনর্বহাল এবং তাদের পাওনা বেতন প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মেক্সিকো উপসাগর, ডেনালি ও পানামা খাল
ট্রাম্প বলেন, তিনি মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর রাখবেন। তিনি আরও বলেন, উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ডেনালির নাম পরিবর্তন করে মাউন্ট ম্যাককিনলে রাখা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্বতটিকে মাউন্ট ম্যাককিনলে হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ১৯১৭ সালে, ওইসময় প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনের অধীনে এর নাম আবারও ডেনালি করা হয়, যা স্থানীয় ঐতিহ্যগত আলাস্কান নাম।
ট্রাম্প তার প্রশাসন পানামা খালের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এটি ফিরিয়ে নিচ্ছি।’
১৯৯৯ সালে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে এটি পানামা খাল কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে আসছিল।
মঙ্গলে মার্কিন পতাকা
ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রশাসন মার্কিন মহাকাশচারীদের মঙ্গলে পাঠানোর জন্য কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মহাকাশে আমাদের ঘোষিত লক্ষ্যের অনুসন্ধান করব, আমেরিকার নভোচারীদের মঙ্গল গ্রহে পাঠাব।’
এ ঘোষণাটি ধনকুবের ইলন মাস্কের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে, যিনি জেফ বেজোসের মতো অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির সিইওদের সঙ্গে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। বেজোস তার কোম্পানি ব্লু অরিজিন এবং মাস্ক তার স্পেস-এক্সের মাধ্যমে মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণ করেছেন।
অভিষেক ভাষণের পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশকিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।