ইন্দো-পাক যুদ্ধে সোফিয়াকে ঘিরে তোলপাড়, জানত না পরিবারও!
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানে হামলা করেছে ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা সোফিয়া কুরেশি। এরপর থেকেই তাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়।
আজ বুধবার (৭ মে) নয়াদ্দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে সোফিয়া পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার ফুটেজ ও মানচিত্র প্রদর্শন করেন। একইসঙ্গে তিন বাহিনীর সমন্বিত অভিযানের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন এই নারী কর্মকর্তা। ব্রিফিংয়ে তার সাহসী বক্তব্য ও প্রতিপক্ষের উদ্দেশে দেওয়া বলিষ্ঠ বার্তার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই নারী।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই সিনিয়র অফিসার কেবল তার পেশাদারিত্বের জন্যই নন, বরং পারিবারিক ঐতিহ্যের জন্যও পরিচিত। তার দাদা ও বাবা সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। দাদা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই পারিবারিক ধারা অব্যাহত রেখেছেন তার স্বামী, যিনি বর্তমানে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যুদ্ধের প্রশিক্ষিত শাখা মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রিতে কর্মরত।

১৯৮১ সালে গুজরাটের ভাদোদরায় জন্মগ্রহণ করেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। তিনি ১৯৯৭ সালে মহারাজা সায়াজিরাও ইউনিভার্সিটি অব বরোদা (এমএসইউ) থেকে রসায়নে বিএসসি ও জৈব রসায়নে এমএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তারপর থেকে বিভিন্ন পদে সফলভাবে দায়িত্ব সামলে পদোন্নতি লাভ করেছেন। এর আগে ২০০৬ সালে কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ভারতীয় কর্মকর্তাদের একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি, যা ছিল নারী হিসেবে প্রথম।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে পুনেতে অনুষ্ঠিত বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় ভারতীয় সেনা দলের নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম নারী কর্মকর্তা সোফিয়া, যা ভারতীয় মাটিতে অনুষ্ঠিত অন্যতম বৃহত্তম বিদেশি সামরিক মহড়া।
এদিকে, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি গণমাধ্যমকে ব্রিফ করে যখন আলোচনায়, তখন আনন্দে চোখ ভিজিয়েছেন তারই যমজ বোন শায়না সানসারা। তিনি মুম্বাইতে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার সহপরিচালক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে টেলিফোনে শায়না বলেন, ‘গতকাল আমাদের ফোনে কথা হয়েছিল। অথচ আজ সকালে কী ঘটতে চলেছে, সে সম্পর্কে তিনি (সোফিয়া) একটি শব্দও বলেনি। এটি আমাদের সবার জন্য একটি বিস্ময় ছিল, তবে সোফিয়াকে এই অবস্থানে দেখতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। দেশের জন্য কিছু করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তার সবসময়ই ছিল।’
শায়ান আরও বলেন, সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ভাদোদরায় তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষকদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি।
সোফিয়ার যমজ বোন শায়না আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, সে যেখানে আছে সেখানেই তার থাকার কথা ছিল। আমাদের তিন ভাই তাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্র বেছে নিয়েছে এবং আমি মডেল হয়েছি। আমার বোন সারা জীবন একজন মনোযোগী ছাত্রী ছিল। আজ সে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একটি কমান্ডিং অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।’
আজ বুধবারের আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সোফিয়ার সঙ্গী ছিলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তিনি স্কুলের পাঠ চুকিয়ে প্রকৌশলে স্নাতক হয়ে যোগ দেন ভারতীয় বিমানবাহিনীতে। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে উইং কমান্ডার হন। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিনি ফ্লাইং ব্রাঞ্চে স্থায়ী কমিশন লাভ করেন। উইং কমান্ডার সিং ‘চেতক’ এবং ‘চিতার’ মতো হেলিকপ্টার ভারতের দুর্গম এলাকা, যেমন জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অত্যাধিক উচ্চতায় পরিচালনা করেছেন। তিনি বহু উদ্ধার অভিযানেও অংশ নিয়েছেন।
ওই ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রীও উপস্থিত ছিলেন।