পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গত দুই যুগের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক সংঘাতের রেশ কাটতে না কাটতেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন করে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বৈরী দুই প্রতিবেশী দেশ একে অন্যের প্রতি তাদের পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার অভিযোগ তুলে গোটা বিশ্বের প্রতি সেগুলো পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে। খবর এএফপির।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রাগার জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থার পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত। অন্যদিকে, ইসলামাবাদ বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ভারতের ‘কালো বাজার’ সম্পর্কে তদন্ত করা।
গত শনিবার যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো দেশ দুটির সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে গোটা বিশ্ব শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল এই ভেবে যে, পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র দুটি হয়তো পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি সেনাঘাঁটিতে সৈন্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি সারা বিশ্বের জন্য একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, একটি দুর্বৃত্ত ও দায়িত্বহীন জাতির কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকাটা আদৌ নিরাপদ কিনা। আমি মনে করি পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রগুলো আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষণে নিয়ে আসা উচিত।’
রাজনাথ সিংয়ের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, ‘আইএইএর উচিত ভারতে পারমাণবিক ও রেডিও অ্যাকটিভ উপাদানের ঘনঘন চুরি ও অবৈধ পাচারের বিষয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করা। এ ধরনের ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয় স্পর্শকাতর ও দ্বৈত ব্যবহারের মতো উপাদানের কালো বাজারের অস্তিত্ব ভারতে থাকতে পারে।’

তবে আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, দুপক্ষের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ রয়েছে এবং তারা রোববার (১৮ মে) নাগাদ অস্ত্রবিরতি বাড়াতে সম্মত হয়েছেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে প্রতিবেশী দেশটিতে ৭ মে বিমান হামলা চালায় ভারত। ভারতের ভাষায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ হামলা চালায় দেশটি। তবে শুরু থেকেই পাকিস্তান পেহেলগামে হামলার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়।
এ ঘটনার পর থেকে টানা চারদিন ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ব্যবহার করে একে অন্যের ওপর হামলা চালায় ভারত ও পাকিস্তান। এসব হামলায় দুদেশে ৭০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারায় যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
পাকিস্তানের কয়েকজন মন্ত্রী অবশ্য বারবারই বলে আসছেন, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার তাদের বিবেচনায় ছিল না এবং সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় দেশটির পরমাণু অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের ও ব্যবহারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে তলবও করা হয়নি।
সারা বিশ্ব যখন পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কার ভেতর সময় পার করছিল ঠিক তখনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির চমকপ্রদ ঘোষণাটি দেন। এরপরই দুপক্ষের একে অন্যের প্রতি যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগের মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি।