যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য প্রস্তুত ইউক্রেনও : জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে, তিনি মস্কোর কাছ থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি আশা করছেন। রোববার ( ১১ মে) বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে সংবাদ সম্মেলনে কিয়েভকে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই ইস্তাম্বুলে আলোচনার জন্য আহ্বান জানান। তবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেননি।
শনিবার (১০ মে) কিয়েভ সফরকালে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং পোল্যান্ডের নেতারা রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে তারা সোমবার (১২ মে) থেকে ইউক্রেনে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।
জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, ‘একদিনও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আমরা আশা করি—রাশিয়া ১২ মে থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করবে। ইউক্রেনও বৈঠকের জন্য প্রস্তুত।
ইউক্রেনের এই নেতা আরও বলেন, তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে ইতিবাচক সংকেত দেখতে পাচ্ছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ যে রাশিয়ানরা অবশেষে যুদ্ধ শেষ করার কথা বিবেচনা করতে শুরু করেছে। পুরো বিশ্ব অনেক দিন ধরে এর জন্য অপেক্ষা করছে এবং যেকোনো যুদ্ধের সত্যিকার অর্থে অবসানের প্রথম পদক্ষেপ হল যুদ্ধবিরতি।’
কিয়েভ এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা মনে করে, তিন বছরের এই সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার একমাত্র উপায় হবে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হিসেবে মনে করা হয় রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর আক্রমণ শুরুর পর থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেন সরাসরি কোনো আলোচনায় বসেনি। ক্রেমলিন ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম কেবল যুদ্ধবন্দি এবং নিহতদের মরদেহ বিনিময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
পুতিনের আলোচনার প্রস্তাব, তবে যুদ্ধবিরতিতে নীরবতা
রোববার ক্রেমলিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন ইউরোপীয় নেতাদের আলটিমেটামের প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা কিয়েভ কর্তৃপক্ষের কাছে ২০২২ সালে ভেঙে যাওয়া আলোচনা পুনরায় শুরু করার প্রস্তাব করছি এবং আমি জোর দিয়ে বলছি, কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই এই আলোচনা হবে।’
পুতিন আরও বলেন, ‘বিলম্ব না করে আমরা ১৫ মে ইস্তাম্বুলে আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব করছি।’ শিগগিরই তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সঙ্গে কথা বলবেন এবং আলোচনা সম্পন্ন করার জন্য তার সাহায্য চাইবেন বলেও জানান তিনি।
পুতিন বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই আলোচনার সময় নতুন যুদ্ধবিরতিতে একমত হতে পারব।
তবে ইউক্রেনের পশ্চিমা সমর্থকদের ‘রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে’ চাওয়ার অভিযোগ করেন পুতিন। তিনি ইউরোপীয় ‘আল্টিমেটাম’ এবং ‘রাশিয়া-বিরোধী বক্তব্য’-এর নিন্দা করেন।
ইউক্রেন থেকে ফিরে এসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুতিনকে তার ভাষণের মাধ্যমে ‘সময় ক্ষেপণের’ অভিযোগ করেছেন।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বিরতির আলোচনা বিষয়ে বলেছেন, এটি ‘রাশিয়া এবং ইউক্রেনের জন্য সম্ভাব্য একটি দুর্দান্ত দিন’। তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর শনিবার (১০ মে) মধ্যরাতে ইউক্রেনে ১০০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে কিয়েভ। তবে বৃহস্পতিবার (৮ মে) যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর কিয়েভ কোনো ড্রোন হামলার খবর দেয়নি। যদিও তারা মস্কোকে শতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। রাশিয়াও ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতি পালন না করার অভিযোগ করেছে।