বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শান্তি রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করবে শি জিনপিং-ম্যাক্রোঁ

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার (২২ মে) এক ফোনালাপে বৈশ্বিক বাণিজ্য বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ফোনালাপে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডি আমদানি নিয়ে চলমান বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের ইঙ্গিতও মিলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্কারোপ হুমকির প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট শি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিধি রক্ষায় ফ্রান্স ও চীনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, ফোনালাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ম্যাক্রোঁ জানান, দুই দেশ কনিয়াক শুল্কসংক্রান্ত ইস্যুতে দ্রুত অগ্রগতি সাধনে একমত হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, শি জিনপিং বলেছেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও ফ্রান্স—আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিধি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করবে। আমরা প্রকৃত বহুপাক্ষিকতাকে সামনে নিয়ে যাব।’
ফোনালাপটি এমন সময়ে হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর চড়া শুল্কারোপের হুমকিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতার মুখে পড়েছে।
শি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যত জটিলই হোক, ফ্রান্স ও চীনের উচিত সঠিক কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে একসঙ্গে কাজ করা, যাতে তারা আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় নির্ভরযোগ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।’
তিনি জানান, চীন ইউরোপকে বিশ্বে একটি ‘স্বাধীন মেরু’ হিসেবে দেখে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ভূমিকা পালনের পক্ষপাতী।
বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমন
চলতি বছরই ইইউ চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক তিন শতাংশ শুল্কারোপ করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক টানাপোড়েন চরমে ওঠে। এর জবাবে চীন ইউরোপীয় ব্র্যান্ডির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত শুরু করে, যার মেয়াদ সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে। চীনে প্রতি বছর ফরাসি কনিয়াক রপ্তানি হয় প্রায় এক দশমিক চার বিলিয়ন ইউরো (এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার)। চলমান পদক্ষেপের কারণে খাতটি প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ কোটি ইউরো ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমাদের প্রযোজকদের জন্য কগনাক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তাই আমরা এটি দ্রুত নিষ্পত্তির পক্ষে একমত হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনের বিনিয়োগ ফ্রান্সে স্বাগত। তবে উভয় দেশের কোম্পানিকে সমান প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ উপভোগ করতে হবে।’
ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ
দুই নেতা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও কথা বলেন। ফোনালাপের পর ম্যাক্রোঁ জানান, তারা একটি ‘স্থায়ী ও দৃঢ় শান্তি’র লক্ষ্যে একমত হয়েছেন, যার সূচনা হবে ‘তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির’ মাধ্যমে।
এ ছাড়া গাজা যুদ্ধ থামাতে ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন ম্যাক্রোঁ। তিনি জানান, আসন্ন ‘দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সম্মেলন’ আয়োজনের জন্য ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সঙ্গে চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই সম্মেলন জুনে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।