আরও সমর্থন জানানোর আহ্বান খামেনির, কী করবেন পুতিন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সোমবার (২৩ জুন) তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি দেশটির সমর্থনে কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর গতকাল রোববার ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায়। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েল প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা এবং দেশটির শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়েছেন। তবে রাশিয়ার আশঙ্কা, এ ধরনের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।
পুতিন ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করলেও, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। যদিও তিনি গত সপ্তাহে সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং পারমাণবিক কর্মসূচির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মস্কোর সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
একটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি পুতিনের কাছে খামেনির একটি চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কথা রয়েছে, যাতে পুতিনের সমর্থন চাওয়া হয়।
ইরানের ওই সূত্রটি রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়ার সমর্থনে ইরান এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারেনি এবং দেশটি চায়, পুতিন ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানকে সমর্থনে আরও কিছু করুক। তবে তেহরান কী সহায়তা চায়, সে সম্পর্কে সূত্রগুলো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে তাদের মধ্যে কী আলোচনা হবে তা জানা যায়নি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস আরাগচির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সমন্বয় করছে ইরান ও রাশিয়া।
তেহরানের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন সদস্য। এর আগে পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরে ভূমিকা পালন করেছিল রাশিয়া, যা ২০১৮ সালে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে বাতিল করেছিলেন।
তবে রাশিয়ার সেনাবাহিনী চার বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে একটি বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে চাইছেন, এই সময়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘর্ষের ব্যাপারে পুতিনের আগ্রহ কমই দেখা যাচ্ছে।
পুতিন বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সংঘাত নিরসনে মস্কোর প্রস্তাবনাগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
পুতিন বলেন, বিমান হামলার সময় ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন দুটি চুল্লি নির্মাণে সহায়তাকারী রুশ বিশেষজ্ঞদের নিরাপত্তার বিষয়ে মস্কোকে আশ্বাস দিয়েছে ইসরায়েল।

মস্কো ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছে এবং এই বছরের শুরুতে তেহরানের সঙ্গে ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে তাদের মধ্যে শতাব্দী ধরে চলে আসা সম্পর্ক মাঝেমধ্যে সমস্যায়ও পড়েছে। অংশীদারত্ব চুক্তিতে অবশ্য পারস্পরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।
রাশিয়ায় পুতিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল, তারা যেন ইরানকে সমর্থন করে ঠিক যেমন ওয়াশিংটন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র ও উপগ্রহ গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে ইউক্রেনকে সহায়তা করেছে।
মার্কিন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গতকাল রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণের প্রস্তাব দেয় রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান।
রাশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ২০০৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘তিনি দাবি করেছিলেন, ইরাকের রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্রের মজুতের কারণে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বিশ্বের জন্য এক আসন্ন বিপদে পরিণত হয়েছিলেন। আবারও আমাদের বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গালগল্প বিশ্বাস করতে, মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের ওপর আবারও দুর্ভোগ ডেকে আনতে। এটি আমাদের গভীর বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে যে, ইতিহাস আমাদের মার্কিন সহকর্মীদের কিছুই শেখায়নি।’