গাজা সিটি দখলে নিতে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা তলব ইসরায়েলের

গাজা সিটি সম্পূর্ণ দখলের জন্য পরিকল্পিত স্থল আক্রমণের আগে প্রায় ৬০ হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে ডেকেছে ইসরায়েল। দেশটির একজন সামরিক কর্মকর্তা জানান, রিজার্ভ সদস্যরা সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। তবে আক্রমণের জন্য মোতায়েন করা বেশিরভাগ সৈন্যই হবে সক্রিয় কর্তব্যরত সদস্যরা। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) পরিকল্পনা অনুমোদন করার পর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জেইতুন ও জাবালিয়া এলাকায় ইতোমধ্যে সেনারা কাজ করছে। এই সপ্তাহের শেষের দিকে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনাটি উত্থাপন করা হবে।
গাজা সিটির লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের অনেক মিত্র এই পরিকল্পনার নিন্দা করেছে। বুধবার (২০ আগস্ট) ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেন, এটি শুধু উভয় পক্ষের জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং পুরো অঞ্চলকে স্থায়ী যুদ্ধের চক্রে নিমজ্জিত করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এদিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানিয়েছে, আরও বাস্তুচ্যুতি ও যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধিতে গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার জন্য ইতোমধ্যে সৃষ্ট বিপর্যয়কর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার ঝুঁকি তৈরি হবে।
গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে পরোক্ষ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল সরকার সমগ্র গাজা উপত্যকা দখলের অভিপ্রায় ঘোষণা করে।
মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর আক্রমণ শুরুর আগে একটি চুক্তি নিশ্চিতের চেষ্টা করছে এবং ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও গাজায় আটক ৫০ জন জিম্মির মধ্যে প্রায় অর্ধেকের মুক্তির জন্য একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, যা হামাস গত সোমবার (১৭ আগস্ট) গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জমা দেয়নি। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গত মঙ্গলবার জোর দিয়ে বলেছেন, তারা আর আংশিক চুক্তি গ্রহণ করবে না এবং একটি বিস্তৃত চুক্তির আওতায় সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হবে। তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন এখনও জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘অপারেশন গিডিয়ন্স রথের পরবর্তী পর্যায়ের’ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বুধবার ৬০ হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে ডাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। মে মাসে শুরু হওয়া এই স্থল আক্রমণের ফলে গাজার অন্তত ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়া ইতোমধ্যে ডাকা ২০ হাজার রিজার্ভ সদস্যকে তাদের বর্তমান আদেশের মেয়াদ বৃদ্ধির নোটিশ দেওয়া হবে বলেও জানায় আইডিএফ।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সেনাবাহিনীর লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে আটক সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ‘সম্পূর্ণ পরাজয়’ নিশ্চিত করা।

গাজায় কর্মরত জাতিসংঘ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো ইসরায়েলি আক্রমণের মানবিক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছে। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, গাজা সিটির সামরিক অভিযান তীব্র করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ইতোমধ্যে ক্লান্ত, অপুষ্টিতে ভোগা, শোকাহত, বাস্তুচ্যুত এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত মানুষের ওপর ভয়াবহ মানবিক প্রভাব ফেলবে। লাখ লাখ মানুষকে দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বাধ্য করা আরও বিপর্যয়ের কারণ এবং এটি জোরপূর্বক স্থানান্তরের শামিল হতে পারে। বেসামরিক জনগোষ্ঠীর জোরপূর্বক স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় অভিযান শুরু করে। হামাসের ওই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৬২ হাজার ১২২ জন নিহত হয়েছেন।