রাখাইন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে চীন-ভারত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে। আরাকান আর্মি (এএ) নামের বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা দেশের গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার দেশের অন্যান্য অঞ্চল পুনরুদ্ধার করলেও, এএ এখন রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪টিই নিয়ন্ত্রণ করছে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি এখন রাজ্যের বাকি অংশ, বিশেষ করে রাজধানী সিত্তে, একটি ভারতীয় বন্দর ও চীন নির্মিত গভীর সমুদ্র বন্দর কিয়াকফিউ দখলের অঙ্গীকার করেছে।
তবে, এই অগ্রগতির ফলে রাখাইন রাজ্যে মানবিক সংকট তীব্র হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর সরবরাহ পথ অবরোধের কারণে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহারের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। সিত্তে শহরে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ আটকা পড়েছে, যেখানে খাবারের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করেছে যে, রাখাইনের মধ্যাঞ্চলের ৫৭ শতাংশ পরিবার মৌলিক খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
সিত্তের দক্ষিণে অবস্থিত কিয়াকফিউ বন্দরটি চীন ও ভারতের উভয়ের জন্যই কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিয়াকফিউ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ, যা দুটি তেল ও গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে। এই বন্দর দখল করতে পারলে এএ চীনকে চাপে রাখতে পারবে।
অন্যদিকে, রাখাইনে ভারতেরও নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। কালাদান পরিবহণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়, যার কেন্দ্রবিন্দু হলো সিত্তে বন্দর। যদি এএ এই বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, তাহলে তারা ভারতীয় বাণিজ্যের ওপর কর বসাতে পারবে, যা তাদের আর্থিক অবস্থাকে শক্তিশালী করবে।

রাখাইনে জাতিগত সহিংসতাও একটি বড় সমস্যা। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে সাত লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। এর মধ্যেই সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের এএ-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীতে পরিণত হবে। তাদের এই বিজয় চীন ও ভারত উভয়ের জন্যই নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি করতে পারে, কারণ উভয় দেশই এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও পরিবহণ করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।