ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের রপ্তানি খাতে ধস, কারখানাগুলোতে ছাঁটাই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কে বড় আঘাত লেগেছে ভারতের রপ্তানি শিল্পে। বিশেষ করে তিরুপ্পুরের তৈরি পোশাক খাত, মুম্বাইয়ের হীরা শিল্প এবং চিংড়ি রপ্তানিকারকরা গভীর সংকটে পড়েছেন। খবর বিবিসির।
তিরুপ্পুরে নীলিমা গার্মেন্টসের মালিক এন কৃষ্ণমূর্তি বলেছেন, অর্ডার বন্ধ থাকায় তার প্রায় ২৫০ জন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিককে বসিয়ে রাখতে হয়েছে। ক্রিসমাস-পূর্ব মৌসুমে যেখানে বছরের অর্ধেক বিক্রি হয়, ঠিক তখনই নতুন শুল্ক আরোপে ধস নেমেছে ব্যবসায়। এখন তারা দেশীয় বাজার ও দীপাবলির বিক্রির ওপর নির্ভর করছেন।
একই পরিস্থিতি আন্ডারওয়্যার প্রস্তুতকারক রাফট গার্মেন্টসেও। মালিক শিবা সুব্রামানিয়াম জানিয়েছেন, প্রায় ১০ লাখ ডলারের পণ্য গুদামে পড়ে আছে, মার্কিন ক্রেতারা কিনছেন না। তিনি হতাশ হয়ে বলছেন, “এই অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমিকদের বেতন দেব কীভাবে?”
শুল্কের কারণে প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়ছে ভারত। আগে যে শার্ট ১০ ডলারে মার্কিন বাজারে বিক্রি হতো, এখন তার দাম দাঁড়াচ্ছে ১৬.৪ ডলার। অথচ চীনের তৈরি একই শার্ট ১৪.২ ডলার, বাংলাদেশের ১৩.২ ডলার আর ভিয়েতনামের ১২ ডলারে পাওয়া যায়।
মুম্বাইয়ের রত্ন শিল্পও বিপাকে। প্রখ্যাত গয়না প্রস্তুতকারক আদিল কোটওয়াল বলছেন, তিনি মাত্র ৩-৪ শতাংশ লাভে ব্যবসা চালান। নতুন শুল্কে সেই সামান্য মুনাফাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তার আশঙ্কা, “আমেরিকান ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যাবে, আমাদের বছরের পর বছরের বাজার মুহূর্তেই ভেঙে পড়বে।”
গুজরাটের সুরাটে, যেখানে বিশ্বের বড় অংশের হীরা পালিশ করা হয়, কারখানাগুলোতে উৎপাদন অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে বা অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এক সময় যেখানে মাসে দুই হাজার হীরা পালিশ হতো, এখন হচ্ছে মাত্র ৩০০।

চিংড়ি রপ্তানিকারকরাও বড় ধাক্কায় পড়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম বৃহৎ বাজার হলেও এখন শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশেরও বেশি। অন্ধ্রপ্রদেশের রপ্তানিকারক থোটা জগদীশ বলেছেন, “চাষের মৌসুম শুরু হয়েছে, কিন্তু নতুন শুল্কে আমরা কী করব, সে সিদ্ধান্তই নিতে পারছি না।”
সরকার শুল্ক-আঘাত কমাতে কাঁচামালের ওপর আমদানি শুল্ক মওকুফসহ কিছু পদক্ষেপ নিলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি যথেষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এখন মেক্সিকো, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশমুখী হবেন।
ইতোমধ্যেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ভারত “রাশিয়ার জন্য ধোপাখানা” হয়ে উঠেছে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

এশিয়া গ্রুপ অ্যাডভাইজরি ফার্মের গোপাল নাড্ডুরের মতে, “ভারতের ব্যবসায়ীদের এখন মন্ত্র হতে হবে—আত্মনির্ভরতা বাড়ানো, বাজার বৈচিত্র্যকরণ এবং কোনো সুযোগ অব্যবহৃত না রাখা।”