ট্রাম্পের শুল্কারোপে ভারতের কোন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কোনটি অব্যাহতি পাবে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভারতীয় পণ্যের ওপর বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ভারতের কোটি কোটি ডলারের বাণিজ্য ও হাজার হাজার কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই শুল্কের কারণ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার বিষয়টি উল্লেখ করেছে।
প্রথমে ভারত থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এরপর রাশিয়ার তেল কেনার জন্য আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা যোগ করে মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এই নতুন শুল্ক এখন রত্ন ও গহনা, পোশাক, জুতা এবং রাসায়নিকসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর প্রযোজ্য হবে।
কোন কোন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানিয়েছে, এই শুল্কের ফলে ২০২৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রপ্তানি ৮৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে।
টেক্সটাইল, রত্ন, গহনা, চিংড়ি ও কার্পেট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জিটিআরআই-এর মতে, এই খাতগুলো রপ্তানিতে ৭০ শতাংশ পতনের মুখে পড়বে, যা লাখ লাখ কর্মসংস্থানকে বিপন্ন করবে।
দ্য ওয়্যার নিউজ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এমকে ভেনু বলেন, পোশাক, রত্ন, মৎস্য ও হস্তশিল্পের মতো শিল্পগুলো এই ক্ষতির মুখে পড়বে। এসব শিল্পে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো এই আঘাত সামলাতে পারবে না। ফলে তাদের ব্যবসা ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর কাছে চলে যাবে।
কোন শিল্পগুলো অব্যাহতি পাবে?
তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এই শুল্কের আওতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে, তা হলো—
ওষুধ শিল্প : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা জেনেরিক ওষুধের প্রায় অর্ধেক ভারত থেকে আসে। সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় ওষুধ শিল্পকে এই শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সেমিকন্ডাক্টর ও কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স : এই দুটি শিল্প আলাদা, নির্দিষ্ট শুল্কের আওতায় থাকবে।

অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত : যাত্রীবাহী গাড়িসহ এই পণ্যগুলোর ওপর ৫০ শতাংশ হারের চেয়ে আলাদা শুল্ক আরোপ করা হবে।
শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষকদের রক্ষা, কর কমানো ও দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারত ‘আত্মনির্ভর’ হবে ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্বার্থপরতার সামনে হতাশ হবে না।
এ ছাড়াও, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা ল্যাটিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো নতুন বাজারে বৈচিত্র্য আনতে পারে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সুনির্দিষ্ট নীতির অভাব রয়েছে ও এই বিশাল ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতকে শাস্তিমূলক শুল্ক দিয়েছে, যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে। এই সিদ্ধান্ত ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে।
দিল্লি বলছে, তাদের রাশিয়ান তেল আমদানি দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য জরুরি। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ‘মুনাফাখোর’ বলে অভিযোগ করেছে। ট্রাম্প ভারতের বাণিজ্য বাধা ও উচ্চ শুল্ক নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে ভারত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে ও ঐতিহ্যবাহী মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আস্থা বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এতে ভারত রাশিয়া, চীন ও ব্রিকসের দিকে ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।