ট্রাম্পের ফোনকল সত্যিই ধরেননি মোদি?

জার্মানির পত্রিকা ফ্র্যাঙ্কফুর্টার অ্যালগেমাইনা জাইটুং জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চারবার ফোনকল করলেও মোদি তা ধরেননি। পত্রিকাটি মার্কিন প্রশাসনের সূত্রের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে ট্রাম্প অন্তত চারবার মোদিকে ফোনকল করেছিলেন, কিন্তু মোদি কোনোবারই তা ধরেননি।
শুধু জার্মানির এই পত্রিকাটি নয়, জাপানের নিক্কেই এশিয়াও এই একই খবর করেছে। সেখানেও সূত্র উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, ‘ট্রাম্পের ফোনকল ধরেননি মোদি’, যার জেরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সংকটাপন্ন হয়েছে।
এই ফোনকলের বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ডয়চে ভেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মার্কিন প্রশাসনও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে জার্মানি ও জাপানের সংবাদমাধ্যমের এই খবর নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা চলছে। ভারতের পত্রিকা টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওয়াশিংটন ডেস্ক লিখেছে, ‘ট্রাম্প অনেক সময়েই নিজের ব্যক্তিগত মোবাইলফোন থেকে বিশ্বনেতাদের ফোনে কল করেন। ফলে হোয়াইট হাউস সব সময় তার ফোন ট্র্যাক করতে পারে না। এ নিয়ে মার্কিন প্রশাসন চিন্তিত। তারা প্রেসিডেন্ট ও তার ফোনকল কতটা সুরক্ষিত তা নিয়ে ভাবছে।’
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার দাবি, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির মতো নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দিয়েছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মন্তব্য, ট্রাম্প যদি মোদিকে ফোনকল করেও থাকেন, তাহলে তা তিনি নিজের মোবাইল থেকে করেছিলেন, ওভাল অফিস থেকে নয়।
ভারতে প্রশাসনিক প্রোটোকল অত্যন্ত বেশি। ভারতের নেতা-মন্ত্রীরা সেই প্রোটোকল মেনে চলেন। ফলে মোবাইল থেকে ফোনকল এসেছিল বলে মোদি ধরেননি, এমন চিন্তাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও এ বিষয়ে প্রশাসনের তরফে কোনো কথা বলা হয়নি। মোদি কিংবা দলের কোনো নেতাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এনডিটিভি এই খবর প্রকাশ করেছে বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায়। সেখানেও বলা হয়েছে, যদি এই খবর সত্যি হয়, তাহলে তার প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মোদিকে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় ফেলেছে। ট্রাম্প একবার নয়, অসংখ্যবার বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করেছেন, তার মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত বন্ধ হয়েছে। পাকিস্তান কার্যত তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু ভারত দাবি করেছে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এই সংঘাত আপাতত বন্ধ হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। ভারতীয় পার্লামেন্টে বিরোধীরা এ বিষয়ে সরকার পক্ষের ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বয়ান দাবি করেছে। যা নিয়ে দৃশ্যত বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীকে।
এদিকে ভারত বিভিন্ন মঞ্চে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা অস্বীকার করায় তার প্রভাব পড়েছে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে। ভারতের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেও ট্রাম্প মুখ বন্ধ করেননি। অতি সম্প্রতি তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে অন্তত সাতটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। বিমানগুলো কাদের, তা অবশ্য তিনি উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে পারমাণবিক লড়াইয়ের আশঙ্কা বন্ধ করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এর কোনো কিছুই ভারত পছন্দ করেনি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। মোদি সে কারণেই ট্রাম্পের ফোন উপেক্ষা করে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অনিন্দ্যজ্যোতি মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘যদি সত্যিই এই ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তার প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কের ওপর পড়বে, সন্দেহ নেই। খেয়াল রাখা দরকার, মোদি ও ট্রাম্প দু’জনেই যথেষ্ট ইগো নিয়ে চলেন। ফলে ইগোর লড়াই আরও বাড়বে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তার আগে ট্রাম্প ও মোদি প্রশাসনকে এই খবরের সত্যতা প্রকাশ করতে হবে। আমার মনে হয় না, সে কাজ করা হবে।’
স্কটের মন্তব্য
মার্কিন অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, কেবল রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্যই ভারতের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক চাপানো হয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের দীর্ঘসূত্রিতাও এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অন্যতম কারণ।
উল্লেখ্য, এর আগে মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছিল, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে মদত দিচ্ছে। সেই কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হচ্ছে।