আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়াল

আফগানিস্তানে আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক শক্তিশালী ভূমিকম্প ও একাধিক আফটারশকের আঘাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এই ভূমিকম্পের আঘাতে ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপির।
এই ভূমিকম্পটি মধ্যরাতের ঠিক আগে আফগানিস্তানে আঘাত হানে এবং রাজধানী কাবুল থেকে শুরু করে প্রতিবেশী পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত বাড়িঘর ও অন্যঅন্য ভবনগুলো কেঁপে ওঠে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সংস্থার তথ্য অনুসারে, ১২ লাখেরও বেশি মানুষ এ সময় প্রবল বা খুব প্রবল ভূকম্পন অনুভব করে।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের কাছে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত কুনার প্রদেশে প্রায় ৮০০ জন নিহত এবং ২ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী নানগারহার প্রদেশে আরও ১২ জন নিহত এবং ২৫৫ জন আহত হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মাতিন কানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা এএফপিকে এক বিবৃতিতে সতর্ক করে জানিয়েছে, কুনার প্রদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু গ্রামে রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।

তালেবান কর্তৃপক্ষ এবং জাতিসংঘ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৪০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে।
কুনারের নুরগাল জেলার কৃষি বিভাগের একজন সদস্য জানান, মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর জন্য বন্ধ রাস্তা পরিষ্কার করতে ছুটে যায় কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো প্রত্যন্ত এবং সেখানে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল অপ্রতুল।
ইজাজ উলহাক ইয়াদ এএফপিকে বলেন, ভূমিকম্পের সময় ছিল ভয় এবং উত্তেজনা... শিশু এবং নারীরা চিৎকার করছিল। আমরা আমাদের জীবনে এমন কিছু কখনো অনুভব করিনি। তিনি জানান, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক গ্রামের মানুষ ছিল ইরান ও পাকিস্তান থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরে আসা ৪০ লাখেরও বেশি আফগানের অংশ।
ইজাজ উলহাক বলেন, ‘তারা এখানে নিজেদের বাড়িঘর তৈরি করতে চেয়েছিল।’
ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, ভূমিকম্পটি জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে নানগারহার প্রদেশে আঘাত হানে এবং এর উৎপত্তিস্থল তুলনামূলকভাবে কম গভীরতায়, মাত্র আট কিলোমিটার গভীরে ছিল।
নানগারহার এবং কুনার প্রদেশ পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী, যেখানে তোরখাম সীমান্ত দিয়ে অনেক আফগান ফেরত এসেছে বা জোর করে ফিরতে বাধ্য হয়েছে। এসব লোকের বেশিরভাগেরই কোনো কাজ বা থাকার জায়গা ছিল না।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তালেবান সরকার এবং কয়েকটি দেশের দেওয়া শোকবার্তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেশটিতে আঘাত হেনেছে, তারপর আমি আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।’
আফগানিস্তানে প্রাথমিক ভূমিকম্পের পর, সারারাত ধরে অন্তত পাঁচটি আফটারশক অনুভূত হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটি ছিল স্থানীয় সময় ভোর ৪টার ঠিক পরে ৫.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প।
আফগানিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প আঘাত হানে, বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালায়, যা ইউরেশিয়ান এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের (শক্ত পাথর) সংযোগস্থলের কাছে অবস্থিত।