নারীর গর্ভফুল পাচার চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

নারীর গর্ভফুল ক্রয়-বিক্রয় চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। দেশে এ ধরনের অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের ঘটনা এটাই প্রথম। আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশিদ এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৭ মার্চ গোপন সংবাদে তারা জানতে পারেন একটি চক্র পিকআপ ভ্যানে করে মানবদেহের অংশ (নারীর গর্ভফুল) নিয়ে ঢাকার ধামরাই যাচ্ছে। পরে পুলিশের একটি দল রাত ১০টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার বলাশপুর হাক্কানীর মোড়ে ব্যারিকেড দেয় এবং পিকআপ ভ্যানটি আটক করে। গাড়িটি তল্লাশি করে পলিথিনে মোড়ানো ৩৫০টি গর্ভফুল, তিনটি ক্যাটগার্ডসহ সুই, একটি খোলা ইনজেকশনের এ্যাম্পল ও একটি ব্যবহৃত গ্লাভস উদ্ধার করে। এ সময় চালক মো. রুহুল আমিনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে।
পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. তানভিন সুলতানার মতামতের ভিত্তিতে গর্ভফুলের আলামতগুলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর জানান, গ্রেপ্তার হওয়া চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে ধামরাই ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন—তারাকান্দা থানার নজরুল ইসলাম (৫৪), মুক্তাগাছার মো. খুরশিদ আলম (২৫), ঢাকার ধামরাইয়ের মো. মুমিনুর রহমান (৩২) ও দেওয়ান মো. অমিত (৩১)।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্মচারীদের সহায়তায় অবৈধভাবে গর্ভফুল সংগ্রহ করে। হিমায়িত করার পর ড্রাইভার মো. রুহুল আমিনের মাধ্যমে ঢাকার ধামরাই এলাকার মো. মুমিনুর রহমানের কাছে সরবরাহ করে। গ্রেপ্তার আসামিরা কোনোপ্রকার বৈধভিত্তি বা অনুমতি ব্যতীত প্রক্রিয়াজাত ও ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। যা আইন অনুযায়ী অপরাধ বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, এসব গর্ভফুল ক্রয়বিক্রয়ের জন্য তারা ডিজি স্বাস্থ্য বরাবর আবেদন করেছেন বলে জানান কিন্তু কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চালানটি ধরা পরার আগের চালানে ৮০টি গর্ভফুল দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে বলেও আসামিরা জানিয়েছে। তবে কোন দেশে পাচার করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
জানা গেছে, বিষয়টি চলতি মাসের আইনশৃখলা কমিটির সভায় গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে। সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেছেন, এভাবে মানবদেহের কোনো অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় ও পাচার নিষিদ্ধ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে শিশু জন্ম নেওয়ার পরে নারীর গর্ভফুল জরুরি ভিত্তিতে ধ্বংস করতে হবে। যাতে কেউ তা সংগ্রহ করতে না পারে।