প্রেমিকার বিয়ের দিন যুবকের মৃত্যু, পরিবারের দাবি ‘পরিকল্পিত হত্যা’

নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিন সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ (২০) নামের এক যুবককে আহত উদ্ধারের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তারা এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে।
গতকাল শুক্রবার (১ আগস্ট) বেলা ১১টার পর গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতুর পাশ থেকে মাসুমকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন এক অটোরিকশাচালক। পরে তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত মাসুম লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল (মধ্যপাড়া) গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
স্বজনরা জানান, উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মাসুমের। তবে পারিবারিকভাবে মেনে না নেওয়ায় সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে। বুধবার (৩০ জুলাই) এলাকা ছেড়ে ঢাকায় কাজের সন্ধানে মাসুম বড় বোনের বাসায় ওঠেন। তবে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে প্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে তিনি সকাল ৬টার পর লোহাগড়ায় পৌঁছান। সকাল ৯টার দিকে চাচাতো ভাই তরিকুল মোবাইলফোনে কল করে জানতে পারেন মাসুম লোহাগড়ায়। তরিকুল তাকে অনুরোধ করেন বাড়িতে ফেরার জন্য। এরপর পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি মাসুমের।
অটোরিকশাচালক সুজন বলেন, ‘তাকে যেখান থেকে উদ্ধার করি, সেখানে দুর্ঘটনার কোনো চিহ্ন ছিল না। জিজ্ঞেস করছিলাম, আশপাশের কেউ দুর্ঘটনার কথা শোনেননি। মাসুমের আহত শরীর দেখে মনে হয়েছে, সম্ভবত তাকে কেউ গাড়ি থেকে ফেলে রেখে গেছে।’
নিহতের চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাসুম সকালে ঢাকা থেকে ফিরে প্রেমিকার বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। এ কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামের সাইফুল মোল্যার কাছে প্রেমিকার বাবা সকালে ফোন দিয়ে জানান মাসুম ঝামেলা করছে। তার ছেলেপেলেরা মাসুমকে পেলে অবস্থা খারাপ হবে। আমরা খবর পাই, মানিকগঞ্জ বাজারের এক পার্লারে প্রেমিকার সঙ্গে মাসুম দেখা করে কথা বলেছে। ওইদিকে হুমকির খবরে আমরা মাসুমকে খুঁজতে বের হই, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল। পরে হাসপাতাল থেকে একজন ফোন করে তার আহত হওয়ার খবর দেন।’
শরিফুল ইসলামের দাবি, বড় গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট হলে তো হাত-পা অক্ষত থাকার কথা না। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল, তার বাঁ হাতের একটা আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা মাসুমকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় মাসুমের প্রেমিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।