জাবি ছাত্র হলের কক্ষে নারী শিক্ষার্থীর প্রবেশের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রদের আবাসিক হল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের একটি কক্ষে নারী শিক্ষার্থী প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তিন সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং (সত্যাসত্য) তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপে একটি ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিতে দেখা যায়, একজন নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের কক্ষে তার কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে ছবি তুলছেন। ছবিতে থাকা নারী শিক্ষার্থীর নাম ইশরাত জাহান। তিনি বাংলা বিভাগের ৫২তম ব্যাচের (২০২২-২৩ সেশন) শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষ তথ্যসূত্র অনুযায়ী, এটি কাজী নজরুল ইসলাম হলের পঞ্চম তলার ৫২৭ নম্বর কক্ষে তোলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছবিতে থাকা ইশরাত জাহান তার ছেলে বন্ধু প্রত্যয়ের নতুন রুম দেখতে হলে আসে। রুমে এসে তারা ছবি তোলে এবং ডিপার্টমেন্টের গ্রুপে আপলোড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বন্ধুদের অন্তঃকোন্দলের মুখে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে আরও ছিলেন বাংলা বিভাগেরই শিক্ষার্থী এফ এম প্রত্যয়, আমিনুল ইসলাম, সামিদুল ইসলাম ও মো. রাশেদ। তারা সবাই ৫২তম ব্যাচের (২০২২-২৩ সেশন) শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ছাত্রীদের ছাত্র হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই কাজী নজরুল হলের শিক্ষার্থীদের একাংশ বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যক্ষদর্শী আমিনুল ইসলাম জানান, ‘ছবিটি গত বছরের অক্টোবর মাসে তোলা। তখন হলে আমরা সদ্য শিফট করেছি, পুরোপুরি চালু হয়নি। তাই বন্ধুর সঙ্গে আমাকে নতুন রুম দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’
আরেক শিক্ষার্থী সাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘এটা হল উদ্বোধনের দিনের ছবি। এই ছবিতে আমি নিজে আছি। হলে মেয়ে প্রবেশ দেখে আমরাই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম প্রথমদিন তাই হয়তো হল প্রশাসন ঢুকতে দিয়েছে। এখানে আমি হল প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি।’
নারী শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, ‘নতুন হলে তখন অনেক মেয়েই গিয়েছিল ছবি তুলতে। আমিও ভাবছিলাম ছাদে গিয়ে কয়েকটি ছবি তুলব, কিন্তু তখন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আর ছাদে যাওয়া হয়নি। পরে বন্ধুদের সঙ্গে রুমেই কয়েকটি ছবি তুলি। অথচ আজকে সেই ছবিটি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে বাজে ক্যাপশন লিখে ভাইরাল করা হয়েছে, যা আমার জন্য অত্যন্ত লজ্জার।’
কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মামুন হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। ইতোমধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট সত্যাসত্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে অফিস সময়ের বাইরে হওয়ায় আমরা অনলাইনের মাধ্যমে তদন্ত নথি পাঠিয়েছি। রিপোর্টের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু এটি হল-সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই প্রভোস্ট ও ওয়ার্ডেন কমিটি বিষয়টি দেখছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ভঙ্গের কোনো ঘটনা ঘটলে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।