স্ত্রী শেলীর ভাষ্যে মান্নার মৃত্যুদিন

মান্নাহীন ১৩ বছর আজ। ২০০৮ সালের আজকের দিনে প্রায় এক দশক ঢাকাই সিনেমাকে নেতৃত্ব দেওয়া এই চিত্রনায়কের মৃত্যু হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ঢাকাই সিনেমার এই অ্যাকশন হিরো শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। যদিও মান্নার মৃত্যু প্রসঙ্গে এখনো ভিন্ন মত পোষণ করেন তাঁর স্ত্রী শেলী মান্না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের শেলী মান্না জানিয়েছেন, মান্না কীভাবে মারা গেছেন, তার সঠিক কারণ এ বছরই জানা যাবে।
মান্নার মৃত্যুদিনের স্মৃতি প্রসঙ্গে এনটিভি অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে শেলী মান্না বলেন, ‘মান্না মাঝরাতে যখন বাসায় ফিরেছে, তখন বুকে একটু ব্যথা করছিল। রাতে খাওয়া-দাওয়া করেছে, কিন্তু ব্যথা তো যায়নি। মান্না অতি সতর্ক একজন মানুষ। আমরা হলে হয়তো এতটা হতাম না। মান্না ইগনোর করে না। অ্যালার্জি হলেও ডাক্তারের কাছে যায়। ওর অসুখ-বিসুখ বলতে কিছু ছিল না, শুধু অ্যাসিডিটি ছিল। যেহেতু ব্যথা কমছে না, মান্না ভাবল ইউনাইটেড হাসপাতালে যাই। কেন ইউনাইটেডে যাবে; কারণ, পিতা-মাতা সিনেমার শুটিং ইউনাইটেড হাসপাতালে করা হয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল, ইউনাইটেড হাসপাতাল মনে হয় বেস্ট। ওয়েল অর্গানাইজড। মান্না কিন্তু গাড়ি চালিয়ে গেছে। ডাক্তারের ভাষায়, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। যদি কারও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, সে কোনোভাবেই গাড়ি চালিয়ে যেতে পারবে না। একটা স্টেপও নিতে পারবে না।’
শেলী আরও দাবি করেন, ‘ইউনাইটেড হাসপাতাল আমাদের যেসব ফুটেজ দিয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে মান্না হেঁটে গিয়েছে। তার বিভিন্ন টেস্ট করিয়েছে। তারপর ভর্তি হয়েছে। তাকে কিন্তু কেউ ধরেও নেয়নি, কিছু না। সে একজন স্বাভাবিক মানুষ গিয়েছে। গ্যাসের পেইন, হার্টের পেইন সেইম। ডাক্তাররাও একইভাবে ট্রিটমেন্ট করেন। মান্না যখন হাসপাতালে ভর্তি হলো, তখন ভোর পৌনে ৫টা। আমি যদি বাংলাদেশে থাকতাম, তাহলে কী করতাম? যে হার্টের স্পেশালিস্ট, তাকে দেখাতাম। এই কারণে... আমার যখন হাত ভেঙে গিয়েছিল, তখন আমি অর্থোপেডিকস ডাক্তারের কাছেই গিয়েছিলাম। সাধারণ ডাক্তাররা কিন্তু আমার হাত জোড়া লাগাতে পারবে না। মান্নার চিকিৎসা কিন্তু সাধারণ ডাক্তাররা করেছে। ট্রিটমেন্ট করে যখন কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছে। ৭টা ৪০-এর দিকে তারা হার্টের একটা ইনজেকশন দেয়। ইনজেকশনের নাম এসকে। অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই এসব করা হয়েছে। আমরা কেস করেছি, এগুলো পয়েন্ট আছে... ওই ইনজেকশন দেওয়ার পর মান্না গোঙরাইছে। গোঙানিতে মান্না তখন বমি করে দিয়েছে। তাদের ডাক্তার রুটিন অনুযায়ী ৯টায় এসেছে। ডাক্তার ফাতেমার আন্ডারে ট্রিটমেন্ট। ওই হাসপাতালে কি প্রোসিডিউর ছিল না বলেন? ওই সময় ইমার্জেন্সিতে নিয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে রাইট টাইমে রাইট চিকিৎসাটা করত, দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিটের হিসাব; কিন্তু দিতে পারেনি। আমাদের সিক্সথ সেন্স কাজ করেছে, এই হতে পারত, ওই হতে পারত।’

মান্নার স্ত্রী শেলী আরও জানিয়েছেন, মান্নার মৃত্যু প্রসঙ্গে চলতি বছরে একটা আদালতে শুনানি হবে। শুনানি হলে হয়তো এক যুগ পরে হলেও ন্যায়বিচার পাবেন। মানুষ জানবে যে মান্না কীভাবে মারা গেছেন।
পর্দার বাইরে মান্নার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার। ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন মান্না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ঢাকা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। এরপর ১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আসেন। নায়করাজ রাজ্জাক মান্নাকে প্রথম চলচিত্রে সুযোগ করে দেন। তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘তওবা’ (১৯৮৪)। তবে সিনেমাটি মুক্তির আগে ‘পাগলি’ শিরোনামে মান্নার একটি সিনেমা মুক্তি পায়।