বিটলসের ‘ইয়েস্টার্ডে’ গানের ৫০ বছর

বিটলস। দুনিয়া কাঁপানো ব্রিটিশ ব্যান্ড। নিজেদের গান দিয়ে বিশ্বজয় করেছে তারা। বিটলসের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম ইয়েস্টার্ডে। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন রেকর্ড করা হয়েছিল গানটি। ওই দিন স্টুডিওতে ছিল বিটলসের সদস্য পল ম্যাককার্টনির দাপট। কয়েকটি গান রেকর্ডিংয়ের জন্য বসেছিল বিটলস।
দুপুরবেলা শুরু হয় রেকর্ডিং। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় ‘আই হ্যাভ জাস্ট সিন আ ফেস’ এবং ‘আই অ্যাম ডাউন’। ‘হেল্প’ অ্যালবামে বি সাইডে ঠাঁই হয়েছিল গান দুটির। দুটি গানের রেকর্ডিং শেষে একটু বিরতি নিয়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে আবারও স্টুডিওতে কাজ শুরু করে বিটলস। এরপরের তিন ঘণ্টায় রেকর্ড করা হয় ইতিহাস। সেই ইতিহাসের নাম ইয়েস্টার্ডে।
ইয়েস্টার্ডে গানের কথা লিখেছিলেন ম্যাককার্টনি। সুরটাও তার করা। তবে সবার আগে এসেছিল সুর। সেই সুরও আবার স্বপ্নে পাওয়া। লন্ডনের উইমপোল স্ট্রিটে বান্ধবী জেন আশরের বাসায় ঘুমিয়েছিলেন ম্যাককার্টনি। সকালে উঠেই বসে পড়লেন বেডসাইডে রাখা পিয়ানোতে। একটা সুর তুললেন। সুরটা কয়েকবার বাজালেন পিয়ানোতে। ভালোমতো তুলে নিলেন মাথায় ঢুকে যাওয়া সুরটি।
পরের কয়েক সপ্তাহ বন্ধুবান্ধবদের যাকে পেয়েছেন সুরটা শুনিয়েছেন আর জিজ্ঞেস করেছেন সুরটা পরিচিত লাগছে কি না? আসলে স্বপ্নে পাওয়ার সুর তো ঠিক নিশ্চিন্ত ছিলেন না আসলেই তার মাথা থেকে বেরিয়েছে নাকি অবচেতন মনে অন্যের সুর বেজে চলেছে মস্তিস্কে!
বোদ্ধা বন্ধুবান্ধবকে শোনালেন কিন্তু সবাই বললেন এই সুর প্রথম শুনছেন তাঁরা। আস্তে আস্তে ম্যাককার্টনির বিশ্বাস পোক্ত হতে থাকল। তাহলে সুরটা তাঁরই সৃষ্টি। এবার সুরে কথা লাগানোর পালা। কিন্তু কথা তো আর মাথায় আসে না। এই কথা, সেই কথা জুড়ে দিচ্ছেন সুরের ওপর কিন্তু কোনোটাই মনে ধরছে না।
মাথার মধ্যে সুর আছে কথা নেই। এভাবে কয়দিন? বান্ধবী জেনকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন পর্তুগাল। সেই সময়ে গাড়ি ড্রাইভ করার সময় হঠাৎ মাথায় কথাগুলো এলো। প্রথমে তিন লাইন লিখলেন। তারপর এটার সাথে মিলিয়ে একটা ছন্দ তৈরির চেষ্টা করলেন। লিখলেন, অল মাই ট্রাবলস সিমড সো ফার অ্যাওয়ে (all my troubles seemed so far away)। কিন্তু কোথাও একটা কিছু যোগ করা দরকার মনে হলো ম্যাককার্টনির। লিখলেন, সাডেনলি (suddenly)।
দাঁড়িয়ে গেল গানটা, মাত্র ১১ লাইনের গান। খুবই ছোট। কিন্তু কথা ও সুর মিলিয়ে মারাত্মক। যে কারো শুনলেই মনে হবে আহারে হুট করে চলে যাওয়া গতকালটা!
জন লেনন বলেছিলেন, গানের সুরটা খুব মেলোডিয়াস কিন্তু কথাটা নিয়ে তার খুতখুতে ছিল। মানে লেননের মতে, গানের কথায় অনেক জায়গায় প্রশ্ন রেখে যাওয়া হয়েছে যার কোনো উত্তর নাই বা সূত্রও নাই। কেন সে চলে গেল (why she had to go), কেন একটা ছায়া ঝুলেছিল দেয়ালে (why was a shadow hanging) এসব কথার কোনো উত্তর নেই গানে। এটা নিয়েই লেননের আপত্তি ছিল।
অবশ্য অনেকে বলেছেন, গানটা প্রেমিকার উদ্দেশে নয়, গানটা লেখার কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছিলেন ম্যাককার্টিনের মা। হয়তো মায়ের জন্যই গানটি লিখেছিলেন তিনি।
ইয়েস্টার্ডে গানটা ছিল বিটলসের প্রথম সলো গান অর্থাৎ ব্যান্ডের আর কেউ গানটিতে বাজাননি। ম্যাককার্টনি নিজেই গেয়েছেন এবং বাজিয়েছেন। তবে সিঙ্গেল হিসেবে রিলিজ না দিয়ে ব্যান্ডের অ্যালবামেই গানটি রিলিজ করেছিলেন ম্যাককার্টনি। বিটলসের গান গাওয়ার ফরম্যাট থেকে দূরে সরে যেতে চাননি তিনি।
১৯৬৭ সালে বিটলস এবং ম্যাককার্টনির বায়োগ্রাফার হান্টার ডেভিসকে ইয়েস্টার্ডে গানটি নিজের হাতে সুন্দর করে লিখে দিয়েছিলেন তিনি। এসব কথা জানা গেল রিডার্স ডাইজেস্ট ও আল্টিমেট ক্লাসিক রক ডটকমের কল্যাণে।