তারাশঙ্করের ‘কবি’র নাট্যরূপ মঞ্চস্থ

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ আয়োজিত বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘কবি’-এর ১৭তম প্রদর্শনী। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘কবি’কে নাট্যরূপ, নাটকের নির্দেশনা ও সুর সংযোজন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইউসুফ হাসান অর্ক। প্রযোজনাটি পরিবেশন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ডোম বংশজাত, সামাজিকভাবে নিগৃহীত এক ছেলের কবি হয়ে ওঠা এবং তার জীবনে ভালোবাসার প্রভাব শেষ পর্যন্ত তাকে কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যায়, অভিনেতাদের দক্ষ অভিনয় কুশল দ্বারা সেটাই প্রতিভাত। কবি নিতাই চরিত্রে সানি ঘোষের বাস্তবসম্মত অভিনয় দর্শককে নাটকের সঙ্গে এতটাই একাত্ম করে ফেলে যে নাটকের শেষে তারা চোখের জলটুকু মোছার কথাও ভুলে যান। ঠাকুরঝি চরিত্রে শ্যামা ভট্টাচার্য গ্রামীণ সারল্যে নিষ্পাপ বধূর ভূমিকায় যেমন সপ্রভিত ছিল, তেমনি বসন্ত চরিত্রে এক নৃত্যপটীয়সী চঞ্চল নারীর ভূমিকায় চেতনা রহমান ভাষাও ছিলেন উজ্জ্বল। ট্র্যাজেডি নাটক হলেও মাসি চরিত্রে ফারজানা হক জলির অভিনয় একটি গতিময় আমোদের সঞ্চার করে।
নির্দেশকের দক্ষ নির্দেশনার কারণেই ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ণনাত্মক রীতিতে পরিবেশিত নাটকটি এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে উপভোগ করেন দর্শকবৃন্দ। নাটকের অনেক স্থানেই নির্দেশকের সৃজনশীল নিরীক্ষণের কারণে বৈচিত্র্য এসেছে, যার কারণে দর্শকের কাছে নাটককে একঘেয়ে লাগেনি। নির্দেশক মনে করেন, নিতাই ভালোবাসতে বাসতে স্রষ্টার সমান উদার হয়ে ওঠে-এই সত্য বিশ্বাস সফলভাবে মঞ্চায়ন করার কারণেই দর্শক একই সঙ্গে দুজন নারীকে ভালোবাসা সত্ত্বেও নিতাইকে ক্ষমা করে দেয়। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এই ধরনের নাট্যচর্চার মাধ্যমেই নাটকের প্রতি দর্শকের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব।’ আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন আবৃত্তিকার মাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাট্যজগৎ যে কত সমৃদ্ধ হতে পারে, সেটি প্রমাণের জন্য দেশব্যাপী থিয়েটারগুলোতে এই ধরনের নাট্যচর্চার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’ সর্বোপরি, মনামী ইসলাম, হালিম শেখ এদের গান এবং জেরিন তাসনিম, সজল, তারেক, রাব্বি, সঞ্জয় প্রমুখ অভিনেতাদের সহযোগিতায় একটি সফল প্রযোজনা হিসেবে সুনামগঞ্জের সুনাম বৃদ্ধি করে এসেছে ‘কবি’।