নায়িকার মুখোমুখি
অর্পিতার কাছে বাংলা একটাই

“ছোট থেকে একটা কথা শুনে বড় হয়েছি। আমার বাবা কথায় কথায় বলতেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর ঘরের লোক।’ তাই ছোট থেকেই মনে গেঁথে গেছে, এপার বাংলা-ওপার বাংলা বলে কিছু নেই। একটাই বাংলা। যার মন এক, ভাষা এক। আর যতবার বাংলাদেশে গেছি, ততবারই বাংলাদেশে বন্ধু বেড়ে যাচ্ছে। (মুচকি হেসে) বাংলাদেশে কত বন্ধু হয়েছে আমার, জানেন আপনি? বাংলাদেশ খুব অতিথিবৎসল দেশ। ইচ্ছা আছে সামনে দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়ে যাব।” সাক্ষাৎকারের প্রথমেই এনটিভি অনলাইনকে এভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন কলকাতার টলিপাড়ার অন্যতম অভিনেত্রী তথা বর্তমানে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরনি অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা আর নমস্কার জানিয়ে প্রথমেই বলে বসলেন, ‘জানেন তো, সম্প্রতি ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছা ছিল। আর আমার ছেলে তৃষাণজিৎ তো ক্রিকেট বলতে পাগল। কিন্তু এমন বিচ্ছিরিভাবে কাজের শিডিউল পড়ল যে আর ঢাকায় যাওয়াই হয়ে উঠল না। তবে বাংলাদেশে আমি প্রায়ই যাই। বিভিন্ন রকম শোয়ের কাজে তো মাঝেমধ্যেই যেতে হয়। এই তো কিছুদিন আগে আপনাদের বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) গৌতম ঘোষের একটি ছবির শুটিং করতে বাংলাদেশ গিয়েছিল। তখন ওদের শুটিংয়ের শেষ দিনগুলোয় গিয়ে ঘুরে এলাম বাংলাদেশে।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ছেড়ে নিজের ঘরকন্নার কথা বলতে গিয়ে অর্পিতা বললেন, ‘দুর্দান্ত চলছে আমাদের সংসার। দেখতে দেখতে তো ছেলের বয়স আট বছর হয়ে গেল। আর আপনাদের বুম্বাদা তো বর্বর বিন্দাস মানুষ। সিনেমা ও সংসার ভালোই সামলাচ্ছে (ফিক করে হেসে ফেললেন)।’ এবারে বিস্ফোরক একখান প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, টলিউডে গুজব শোনা যাচ্ছে, আপনি নাকি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আইডিয়া’ কোম্পানি ভেঙে ‘মাইডিয়া হান্ড্রেড’ তৈরি করেছেন। আর এ নিয়ে নাকি বুম্বাদা আর আপনার মধ্যে ভাঙনের শুরু হয়েছে? এবারে রীতিমতো অবাক বিস্ময়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অর্পিতা বললেন, “এ প্রশ্নের কী উত্তর দিই, বলুন তো? আমার তো হাসি পাচ্ছে। জানি না, আপনাদের বুম্বাদা এখানে থাকলে কী উত্তর দিত! তবে আমি এটুকু বলতে পারি, তৃষাণজিৎ আমাদের বড় ছেলে। ‘আইডিয়া’ আমাদের মেজো ছেলে আর ‘মাইডিয়া হান্ড্রেড’ আমাদের একেবারে নিউ বর্ন বেবি। বাকিটা যাঁরা যেমন বোঝেন। তবে আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, এমন কিছু বলবেন না বা লিখবেন না, যাতে বুম্বাদা কষ্ট পায়।”
ক্যামেরার লাইমলাইট থেকে বেরিয়ে এমন বাণিজ্যিক ভাবনার কারণ প্রসঙ্গে অর্পিতা বললেন, ‘বহুদিন থেকেই শুটিং করতে গিয়ে আমার বারবার বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা নিয়ে ইন্টারেস্ট ছিল। তার পর বিয়ে হয়ে গেল। আই বিকাম আ মাদার। প্রায় ছয় বছর সিনেমা থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছি। তবে আমার ইচ্ছাগুলো মরে যায়নি। তাই কোম্পানির বিষয়টি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।’
সিনেমা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও ছোট পর্দায় কিন্তু বিচরণ রয়েছে অর্পিতার। বিশেষ করে জি বাংলার গত ড্যান্স বাংলা ড্যান্সের বিচারকের ভূমিকায় বারবার দেখা গেছে তাঁকে। ড্যান্স প্রসঙ্গে অর্পিতা বললেন, ‘ড্যান্স পারফর্মকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই আমি। ড্যান্সকে ঘিরে আমি সব সময় প্রাণবন্ত থাকতে পারি। তবে ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে এখন খুব চুজি হয়ে গেছি। এখন চল্লিশের কোঠায় দাঁড়িয়ে তো আর নায়িকা হতে পারি না, সেই অর্থে। তবে আমাকে আমার মতো চরিত্র খুঁজে নিতে হবে।’ একসঙ্গে শুটিং, ফ্যামিলি, ব্যবসা সামলানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত থাকি, বাট স্ট্রেসফুল নয়। কারণ, আমি খুব এনজয় করি লাইফকে। আমার ছেলে আমার কাছে থাকে না। ও হোস্টেলে থাকে। তাই নিজের জন্য একটা বড় সময় পাই। যে সময়কে ভাগ করে নিয়েই শিডিউল ঠিক করে চলি।’
কথায় কথায় সময় গড়াতে থাকে। একসময় জোড় হাত করে উঠে দাঁড়িয়ে অর্পিতা বললেন, ‘আজ আর নয়। বাংলাদেশের সবাইকে আমার অসংখ্য ধন্যবাদ। অবশ্যই ধন্যবাদের বার্তাটা আপনার সংবাদমাধ্যমের দ্বারা সবার কাছে পৌঁছে দেবেন কিন্তু।’ বলেই ফের এক পসলা হেসে ফেললেন অর্পিতা।