নাম হলে বদনাম হবেই : শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সিনেমার জগতে তিনিই একমাত্র অভিনেতা, যাঁর কোনো মোবাইল ফোন নেই। অবশ্য মোবাইল ফোন রাখতেও চান না তিনি। আজকালকার দিনে মোবাইল ছাড়া কমিউনিকেশনে অসুবিধা হয় কি না প্রশ্ন করলেই চটজলদি জবাব আসে, ‘আমাকে যার দরকার তিনি ঠিকই আমাকে খুঁজে নেবেন। মোবাইল টোবাইল দরকার পড়বে না। মানুষকে খুঁজে নেওয়ার অনেক রাস্তা আছে।’ আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বলতে পারেন অনেকটা সেকেলে ধাঁচের নীতিতে বিশ্বাসী টলিউডের এই অভিনেতার নাম শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
টলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা প্রয়াত শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে। ক্রমাগত বিচিত্র চরিত্রে নজরকাড়া অভিনয় করে দর্শকসমাজে সাড়া জাগিয়েছেন শাশ্বত। কখনো সিরিয়াল কিলার, কখনো পাড়ার কুদো মাস্তান, কখনো গোয়েন্দাগিরি-এমন সব রকমারি চরিত্রে সাবলীল ভঙ্গিতে অভিনয় করে নিজের অভিনয়দক্ষতার প্রমাণ করে দিয়েছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। আজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে তিনি। কিন্তু জনপ্রিয়তার চূড়ায় উত্তরণ করেও পেছনে ফেলে আসা অতীতকে ভুলতে চান না শাশ্বত। জানালেন, অভিনয়জগতে তাঁর অন্যতম টার্নিং সময় ছিল সন্দীপ রায়ের ফেলুদা সিরিজে তোপসে চরিত্রে অভিনয় করা। এ ছাড়া ‘রূপকথা’ বলে টেলিভিশনে একটি মেগা ধারাবাহিকে অভিনয় করেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তবে দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে এসে ইন্ডাস্ট্রিতে আজ নিজের আইডেন্টিটি তৈরি করতে প্রায় ১০ বছর লেগে গিয়েছে। তাও নাকি বাবার পরিচয় আজও তাঁকে ঘিরে রাখে। অনেকে নাকি এখনো শুভেন্দুর ছেলে বলেই জানেন তাঁকে।
শাশ্বতের অভিনীত অন্যতম চরিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘কাহানি’ ছবির বব বিশ্বাসের চরিত্র। তবে একই ধরনের চরিত্রের ঘেরাটোপে বন্দি থাকতে রাজি নন শাশ্বত। নিজেই জানিয়েছেন, বব বিশ্বাসের চরিত্রে অভিনয় করার পর আমার কাছে সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য পরপর বেশ কয়েকটা অফার এসেছিল। কিন্তু আমি নিইনি। ফিরিয়ে দিয়েছি। একই ঘরানার চরিত্রে নিজেকে আটকে রাখতে একেবারেই না পছন্দ শাশ্বতের। ইন্ডাস্ট্রিতে সুস্থ প্রতিযোগিতাকে সব সময়ই মর্যাদা দিতে চান তিনি। তবে প্রতিযোগিতার ভিড়ে আলোচনা-সমালোচনাকে ভয় পান না তিনি। শাশ্বত বিশ্বাস করেন, নাম হলে বদনাম হবেই। আর অর্থ উপার্জনের প্রশ্নে সেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবির বিখ্যাত সংলাপ- ‘জানো দুর্গা টাকা থাকবে না, কাজগুলোই থেকে যাবে’। সেই কালজয়ী সংলাপের রেশ ধরেই তাঁর বক্তব্য, টাকার পেছনে যাঁরা দৌড়াচ্ছেন, তাঁদের সুগার-টুগার, প্রেসার-ট্রেসার হচ্ছে। নিজের কাজটাকেই প্রাধান্য দিতে চান শাশ্বত। এমনকি অভিনয়জগতে সব ধরনের চরিত্রকেই গুরুত্ব দিতে চান তিনি। তা সে নায়ক হোক বা ভিলেন। নিজেই বলেন, রাবন না থাকলে কি আর রাম অত বড় হতো? কলেজে পড়ার সময় থেকেই অভিনয়জগতে আসক্ত হয়ে পড়েন শাশ্বত। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর এলাকায় কলেজে পড়ার সময়েই দিনে নাকি অন্তত দুটো করে সিনেমা দেখতেন! আজ অভিনয়ে পারদর্শিতার পরিচয় দেওয়ার পর পরিচালক হওয়ার বাসনা রয়েছে তাঁর। শাশ্বত মনে করেন, ভালো ডিরেক্টরের মুনশিয়ানা হলো বিষয় অনুযায়ী পরিচালনা করা। শুধু টাকা রোজগারের চিন্তা মাথায় রাখলে ভালো সিনেমা তৈরি করা যায় না।
আগামীতে ভালো কাহিনী পেলে আর সুযোগ এলে পরিচালকের ভূমিকায় নামতে কোনো আপত্তি নেই তাঁর। আজ স্বীকার করেন, জীবনের প্রথমে জোছন দস্তিদারের চার্বাক নাট্যগোষ্ঠীতে অভিনয় করতেন। তারপর সেখান থেকেই টেলিভিশনে আসেন। ওই সময় মন দিয়ে ওই মৌলিক শিক্ষা না নিলে আজ যতটুকু হয়েছে সেটা আর হতো না। তা ছাড়া অভিনেতা বাবার পরামর্শ তো ছিলই। তবে আজ নাম-ডাক, খ্যাতির শিখরে উঠেও এখনো নিজের কাজ নিয়ে ভাবতে চান তিনি। বলেন, ভালো কাজ করার আনন্দই আলাদা। তাই যখন যে কাজটা করব সেটা ভালোভাবেই করতে চাই। যাতে সেটা আগেরগুলোর থেকেও আরো আরো অনেক ভালো হয়।