এত বছর কাম করলাম, মায়া লাগে : মেশিনম্যান রুবেল
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/10/14/photo-1571029768.jpg)
ছত্রিশ বছর আগে ১৯৮৩ সালে যখন রাজমণি সিনেমা হলটি আলোর মুখ দেখেছিল, কী ভিড় সিনেপ্রেমীদের। একটি টিকেট পাওয়ার জন্য হট্টগোল-হাতাহাতিও হতো দর্শকদের। সেসব এখন অতীত। গত শনিবার বন্ধ হয়ে যায় এ প্রেক্ষাগৃহ। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একই ভবনের রাজিয়া সিনেমা হলটিও।
সমস্ত আনন্দের স্মৃতি মানুষের মনে জমা রেখে অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থিত রাজমণি সিনেমা হল। গত শুক্রবার হয়েছে শেষ শো। চলেছে শাকিব খানের ‘নোলক’। গতকাল রোববার সরেজমিনে প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে দেখা যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হলের অন্দর। এক কোনায় হালকা আলোয় জ্বলছে হলদে আলোর বাতি। ধুলোভরা দেড় হাজার শূন্য আসনের সারি।
২৬ বছর ধরে রাজমণি হলে মেশিনম্যান হিসেবে কাজ করছেন মোহাম্মদ রুবেল। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় ঢুকছি। অ্যানালগ চালাইছি। ডিজিটাল মেশিন দিল, তাও চালাইছি। অ্যানালগের সময় ভালোই ছিল। ভালোই চলত ছবি। ডিজিটাল আসার পর মোটামুটি হইল। এখন সিনেমাই নাই, দর্শক হইবো কোত্থিকা?’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবেল বললেন, ‘এত বছর কাম করলাম। ২৬ বছর। আমার মায়া লাগতাছে। এইহান থিকা গেলেগা আমার রিকশা চালাই খাইতে হইব।’
২৬ বছর আগে যখন রুবেল রাজমণিতে চাকরি শুরু করেন, তখন বেতন অবশ্য কম ছিল। তবে টিকেট বিক্রি হতো ভালো। টাকাপয়সাও পেতেন। ভালোই চলত। এখন বেতন বেড়েছে। এমন সময়ই বন্ধ হয়ে গেল রাজমণি। রুবেল বলেন, ‘বেতনডাও বাড়ছে আমার, হলডাও বন্ধ হইয়া গেল গা!’
‘আমার খারাপ লাগতাছে। ২৫-২৬ বছর ধইরা একটা জায়গায় কাম করতাছি। মায়া লাগার কথা না? মায়া লাগতাছে,’ যোগ করেন রুবেল।
কেন বন্ধ হলো রাজমণি? নির্মাতা ও হল মালিক আহসান উল্লাহ মণি বলেন, ‘ছবির অভাবে, ফিল্মের অভাবে, চলচ্চিত্রের অভাবে, বন্ধ হয়ে গেছে—ছবি নাই। আমি একসময় সিনেমা হল মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলাম। সে সময় ৩০০ হল থেকে প্রায় ১৪০০ হল করেছিলাম। প্রায় ২০টা থেকে ১০০টা ছবি আমি বানিয়েছিলাম। এটা আমার হাতেই ডেভেলপ হয়েছিল... শাবানা, ববিতা, কবরী... এগুলো মোটামুটি আমাদের আমলেই তৈরি হয়েছিল।’
দীর্ঘদিন ধরেই ভালো সিনেমা হচ্ছে না। আর তাই কমে যাচ্ছে হলের সংখ্যা। ব্যবসাই নেই। রাজমণির মালিক আহসান উল্লাহ মণি আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে একদিন চলচ্চিত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে।