‘মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র এখনো হয়নি’

‘একটি দেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়, তা নানাভাবে তুলে ধরে গণমাধ্যম; তার প্রতিফলন হয় সমাজে। পরিবেশ পুনর্গঠন হয়। নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়, দেশ এগিয়ে যায়। চলচ্চিত্র হচ্ছে সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মাধ্যম, কারণ এর পুরোটাই দর্শকের হাতে। এই মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের যে মহাকাব্যিক দিকটি উঠে আসতে পারত, সেটা এখনো হয়নি, যা হয়েছে তাতে যুদ্ধে ব্যক্তির অভিজ্ঞতাই উঠে এসেছে শুধু।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও চলচ্চিত্র নিয়ে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
বিশেষ সাক্ষাৎকারে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ অনেকভাবে উঠে এসেছে। এরই মধ্যে ৫০টিরও বেশি ছবি হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম নির্মাণ হয় ‘ওরা ১১ জন’, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অভিনয় করেছেন। সত্য অনেক ঘটনাই ওই ছবিতে দেখানো হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ অনেক বড় একটা বিষয়। এটা নিয়ে মহাকাব্যিক কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হওয়া উচিত ছিল, যা এখন পর্যন্ত হয়নি। কোনো ব্যক্তি বা স্থানের ঘটনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বললে পুরো মুক্তিযুদ্ধ তুলে আনা সম্ভব নয়।”
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ছবি হয়েছে, এখনো হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই সরকারি অনুদান নিয়ে বানানো হচ্ছে, ব্যক্তি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ছবি হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসির উদ্দীন বলেন, “আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের বাজার নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর দর্শক হলে গিয়ে ছবি দেখতে চান না। এমনকি আমাদের ছবিও লোকজন টাকা দিয়ে দেখে না। পাইরেটেড ছবিটাই সবাই দেখছেন। ৬০-৭০ লাখ টাকার বেশি বাজার থেকে তুলে আনা যায় না। আর যুদ্ধের ছবি বানাতে অনেক বড় বাজেট লাগে। আমি চার কোটি টাকা খরচ করেছি ‘গেরিলা’তে। এক কোটি টাকা ফেরত পেয়েছি। যেহেতু এটিও ব্যবসা, তাই একজন ব্যবসায়ী চিন্তা করবেন যে এই ছবির টাকা কীভাবে তুলে আনব। এ কারণেই সরকারি অনুদানের টাকায় মুক্তিযুদ্ধের ছবি বেশি হচ্ছে।”
অনুদানের বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই টেলিফিল্মের মতো, এমন অভিযোগ শোনা যায়। এই অভিযোগ কি ঠিক বা পরিপূর্ণ চলচ্চিত্র আসলে কেমন হবে? জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আসলে চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম, নাটক, মঞ্চনাটক প্রতিটিরই আলাদা একটা ভাষা আছে। অনেক ভালো নাটক বা টেলিফিল্ম বানাতে পারলেই যে সে ভালো চলচ্চিত্র বানাতে পারবে, তা নয়। আমার মনে হয়, যাঁরা ভালো নাটক বানিয়ে মনে করেন যে চলচ্চিত্রও ভালো বানাব, তাঁদের আসলে আগে জানা উচিত চলচ্চিত্রের ভাষা। না হলে শুধু অনুদানের চলচ্চিত্রই নয়, যেকোনো চলচ্চিত্রকে টেলিফিল্ম মনে হবে।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের চেয়ে এগিয়ে আছে মঞ্চনাটক। তিনি বলেন, ‘বীরাঙ্গনা নিয়ে বাংলাদেশে কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি। কিন্তু মঞ্চে অনেক কাজ হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, তা উঠে এসেছে মঞ্চেই বেশি।’ তবে নাসির উদ্দীন আশাবাদী, তিনি মনে করেন, চলচ্চিত্রে ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরো মানসম্মত কাজ হবে ভবিষ্যতে।