দিতির বিদায়
‘এত বড় শিল্পী, কোনো দেমাগ দেখিনি কোনোদিন’

নারায়ণগঞ্জের মানুষ সকাল থেকে অপেক্ষা করেছিলেন কখন আসবে অভিনেত্রীর মৃতদেহ। আজ সোমবার সোনারগাঁওবাসীর এই অপেক্ষা শেষ হয় বেলা ১২টা ২০ মিনিটে, যখন অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির মৃতদেহ পৌঁছায় দত্তপাড়া জামে মসজিদ মাঠে। মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পরে আশপাশে। শেষবারের মতো দিতিকে দেখতে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। স্থানীয় স্কুল-কলেজ ছুটি হয়ে যায় বেলা ১১টার মধ্যেই।
দিতিকে দেখতে আসা মানুষের ভিড়ে নারী ও শিশুদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাবেয়া আক্তার তাঁদের একজন। তিনি বলেন, ‘সোনারগাঁও জিআর স্কুলে ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি, তখন দিতি আপা ক্লাস নাইনে পড়েন। স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে তিনি গান করেছিলেন। তখন থেকেই দিতি অনেক ভালো শিল্পী ছিলেন। এরপর যখন ওনাকে বিভিন্ন সিনেমায় দেখতাম ,অনেক ভালো লাগত। গতকাল যখন শুনলাম তিনি মারা গেছেন, মনটা অনেক খারাপ ছিল। মনের টান থেকেই চলে এসেছি। সোনারগাঁওয়ের সব মানুষই ওনাকে দেখতে এসেছে।’
দিতি পড়াশোনা করতেন সোনারগাঁও জিআর ইনস্টিটিউশনে। আজ সেই বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস নেওয়া হয়নি। সকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীরা দিতিকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল। নবম শ্রেণির ছাত্র সবুজ বলে, ‘আমাদের স্কুলে আজ নাম ডাকার পর ছুটি হয়ে গেছে। স্কুলের সবাই এক মিনিট নীরবতা পালনের পর ছুটি দেওয়া হয়। আমরা ওনার জানাজা পড়ার জন্য এখানে এসেছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, উনি যে আমাদের স্কুলে পড়ালেখা করেছেন সেটা আগে জানতাম না। শুনে খুব ভালো লেগেছে। এত বড় একজন শিল্পী আমাদের শহরে জন্মেছেন আবার তিনি আমাদের স্কুলে পড়েছেন। নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে।’
দিতিদের পাশের বাড়ির রানি সরকার, দিতি তাঁকে চাচি বলে ডাকতেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন এই বাড়িতে বউ হয়ে আসি, তখন দিতি ক্লাস ফোরে পড়ত। পাশেই তার ফুফুর বাড়ি, সেখানে গান শিখত। গানের গলাটা অনেক ভালো ছিল মেয়েটার। সারা দিন এই বাড়ি, সেই বাড়ি চষে বেড়াত। সবচেয়ে বড় গুণ ছিল সব মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর। সবগুলো ছেলেমেয়েকে সারা দিন এক করে রাখত। খুবই মিশুক একটি মেয়ে ছিল দিতি। এত বড় শিল্পী, কোনো দেমাগ দেখিনি কোনোদিন। বড় হয়েও যখন এখানে বেড়াতে এসেছে, তখনো সবার সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। আজ মেয়েটা আমাদের আগেই চলে গেল।’
মা-বাবার কবরের পাশেই শেষ ঠিকানা হয় সদ্যপ্রয়াত চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির। আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের দিয়াপাড়ায় জানাজা শেষে দত্তপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁর লাশ। দিতির ইচ্ছে অনুসারেই তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে নেওয়ার আগে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনে (বিএফডিসিতে) নেওয়া হয় দিতির মরদেহ। এ সময় সেখানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা দিতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিএফডিসিতে রাখা হয় দিতির মরদেহ।
এরপর দুপুর সোয়া ২টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে দিতি রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি।