এটাই কি মান্নার প্রাপ্য?

৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে ‘মান্না ডিজিটাল ভবন’ থেকে ‘মান্না’ নামটি বাদ দিয়ে নতুন করে উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি। এ ঘটনায় এফডিসির শিল্পী, পরিচালক এবং তাঁর পরিবারের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটির পেছনে উপযুক্ত কোনো কারণও দেখতে পাচ্ছেন না কেউই। এভাবে এফডিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে মান্নার নাম মুছে দেওয়াকে তাঁর স্মৃতিকে চিরতরে হত্যার শামিল মনে করছেন মান্নার সহযোদ্ধারা।
‘বাংলা চলচ্চিত্রের যুবরাজ’ খ্যাত মান্নার নাম তুলে নেওয়ায় চলচ্চিত্রশিল্পী ও পরিচালকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। অনেক পরিচালক এবং শিল্পী প্রকাশ করেছেন তীব্র ক্ষোভ। পরিচালক মোহম্মদ হোসেন জেমী মনে করছেন, এ ঘটনার মাধ্যমে আসলে মান্নার স্মৃতিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে এভাবেই মান্নার মৃত্যু হলো। এটাই কি তাঁর প্রাপ্য ছিল? এ দেশের ছবিতে মান্নার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। সে বেঁচে থাকলে চলচ্চিত্রের আজ এই অবস্থা হতো না।’
নায়ক মান্নার স্ত্রী ও মান্না ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেলী মান্না বলেন, ‘নায়ক মান্না শুধু শিল্পী সমিতি ও প্রযোজক সমিতির সদস্য ছিলেন। এখন মান্নার নামে ভবনটির নামকরণ যদি কোনো কারণে নীতিমালা অনুযায়ী না হয়ে থাকে, তাহলে এ নিয়ে সমিতিগুলোকে নোটিশ দেওয়া যেত, সময় দেওয়া যেত। কিন্তু তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে কাজটি করল, যা দুঃখজনক। এটা শিল্পী সমিতি ও প্রযোজক সমিতিরও গাফিলতি। তারা সবকিছু জেনেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু তার পরও কাজটি করার আগে অন্ততপক্ষে একবার সবাইকে জানানো উচিত ছিল।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির সহসভাপতি ওমর সানি এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘বিষয়টি আমি জানতাম না। আজকে জেনে অবাক হয়ে গেলাম।’ ওমর সানি বলেন, ‘আমি যদি আগে জানতাম, তাহলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করতাম না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান, সেহেতু আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। তবে আমার মনে হয়, মান্নার মতো আপাদমস্তক চলচ্চিত্রপ্রেমী একজন শিল্পীর নাম মুছে ফেলার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানেন না। তিনি জানলে এফডিসি কর্তারা এমনটি করার সাহস পেতেন না।’
২০০৮ সালে তৎকালীন তথ্যসচিব জামিল ওসমান এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ ন ম বদরুল আমিন বেশ ঘটা করেই মান্না ডিজিটাল ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন। দীর্ঘ সাত বছর পর মান্নার নামটি হঠাৎ করেই মুছে ফেলার পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, মান্নার নামটি এফডিসির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত ছিল না। সবার প্রশ্ন, অনুমোদিত না হলে তৎকালীন তথ্যসচিব এবং এফডিসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জামিল ওসমান মান্নার নামে ডিজিটাল ভবন উদ্বোধন করেছিলেন কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য নেই কারো কাছেই। এমনকি এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম হারুন-অর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল, তিনিও এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।