তিন কন্যাকে লেখা এথান হকের চিঠি

পুরো পরিবার নিয়ে এথান হক—কন্যা মায়া, ক্লেমেন্টাইন, ইন্ডিয়ানার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে শিশুপুত্র লেভনকে। লেভনকে কোলে নিয়ে রয়েছেন এথানের স্ত্রী রায়ান। ছবি : সংগৃহীত
এথান হক একজন জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেতা, লেখক এবং পরিচালক। ডেড পোয়েটস সোসাইটি, বয়হুড, গ্যাটাকা, বিফোর সানরাইজ, ট্রেইনিং ডে-এর মতো জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য চারবার মনোনয়ন পেয়েছেন, অন্যান্য পুরস্কারও পেয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক। বাবা দিবসে বিখ্যাত গণমাধ্যম ‘টাইম’-এর একটি বিশেষ উপস্থাপনায় প্রিয় কন্যাদের জন্য একটি চিঠি লিখেছেন তিনি। বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে পাঠকের জন্য সেই চিঠিটি ভাষান্তর করা হয়েছে।
প্রিয় কন্যারা,
আমি মাঝেমধ্যে একটা ব্যাপার ভেবে অবাক হই। এই যে শিশু থেকে পরিপূর্ণ নারী হয়ে ওঠার পথে তোমাদের যাত্রাটা কেমন, সেটা ভেবে। নিজের সঙ্গে কীভাবে মেলাব, বুঝতে পারি না। এটা কি আমার মতোই? এটা কি একেবারেই আলাদা, নাকি স্রেফ একটু অন্য রকম? আমার জন্য বিষয়টা আসলে এমন—জীবনের অনেক কিছুই আসলে একই রকম। মানুষের হৃদয়ে তো পুরুষ বা নারী দিয়ে, মানে লৈঙ্গিক পরিচয় দিয়ে আলাদা করা যায় না। আমি এমনটাই মনে করি।
মাঝেমধ্যে একটা ব্যাপার ভেবে আমার খারাপ লাগে—অনেক নারীই জীবনযুদ্ধের যে খেলা, এর সৌন্দর্যটা মিস করে। আমি বলব যে, তোমার অবশ্যই তোমার শরীরকে চিনে ওঠা উচিত, বোঝা উচিত যে শরীর আর খেলাধুলা—এ দুটি থেকে শেখার আছে অনেক। যোগব্যায়াম বা নাচও দারুণ বিষয়, তবে খেলাধুলাকে একেবারে বাতিল করে দিও না। এমন কিছু রহস্য রয়েছে, যেগুলো তুমি কেবল তখনই জানতে পারবে, যখন তুমি তোমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দৌড়াবে। ক্লেমেন্টাইন আর ইন্ডিয়ানা—তোমরাও শুরু করে দিতে পারো।
ভালোবাসা নিয়ে কথা বলা কঠিন ব্যাপার। আমি এসব বলতে গেলে লজ্জা, টিনএজারদের মতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। তবে আমি তোমাদের এটা বলতে চাই যে জীবনটা তোমাদের, আর আমি চাই তোমরাই এর পুরো কর্তৃত্ব নিয়ে রাখো। তোমার সমস্ত প্যাশনকে আবিষ্কার করো, সেগুলোকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নাও। জেনে রাখো, প্রেমকে উপভোগ করার সবচেয়ে বড় শর্ত নিজের প্রতি সম্মানবোধ। যদি তুমি নিজেকে ঠিকঠাক শ্রদ্ধা করতে পারো, তাহলে আশপাশের মানুষজনের গুণাগুণ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবে। তখন তুমি অন্যদেরও শ্রদ্ধা করতে পারবে। এই বিষয়টা পর্যায়ক্রমিক, ডোমিনোর এফেক্টের মতো। শ্রদ্ধাবোধের আধারেই ভালোবাসার আবাস, সেখানেই প্রস্ফুটিত হয় ভালোবাসা।
আমার মা আমাকে একজন নারীবাদী হিসেবে গড়ে তুলেছেন, তেমনটা আমি তোমাদের ক্ষেত্রে কীভাবে করব, ভেবে পাই না।
মা আমাকে যে সেরা উপদেশ দিয়েছিলেন তা হলো, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্তত এক মাইল হাঁটতে ভুলো না। আরেকটা হলো, কষ্ট সারানোর জন্য পড়ার চেয়ে ভালো কিছুই হতে পারে না। কাজেই পড়ো। এতে তুমি আরো মেধাবী/ইন্টেলিজেন্ট হয়ে উঠবে। বিষয়টা খুবই সহজ। আমরা সবাই তো আমাদের চোখের ক্ষুদ্র পরিসর দিয়ে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে দেখি, বই হলো আরেকটা বাড়তি পরিসর।
আর মনে রাখবে, জীবনে যাই হোক না, তুমি এটা সামলাতে পারবে এবং সুখী হতে পারবে; নইলে সামলাতে পারবে না এবং ভেঙে পড়বে। অনেক ব্যর্থতা সাফল্যের ফুল হয়ে ফুটেছে, আবার অনেক সাফল্য ঠিকমতো সামলানো যায়নি বলে একেবারে দুমড়ে গিয়েছে।
আজকে, এই বাবা দিবসে আমি তোমাদের একটা নোট দিতে চাই। এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড তাঁর ১১ বছরের মেয়ে স্কটিকে এটা দিয়েছিলেন। উপদেশগুলো দারুণ, এর চেয়ে ভালো আমি বলতে পারি না।
যে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করবে :
সাহস নিয়ে চিন্তা করবে
পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তা করবে
যোগ্যতা নিয়ে চিন্তা করবে
কর্তৃত্ব নিয়ে চিন্তা করবে
যেগুলো নিয়ে চিন্তা করবে না :
সবার কথা নিয়ে চিন্তা করবে না
পুতুল নিয়ে চিন্তা করবে না
অতীত নিয়ে চিন্তা করবে না
ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করবে না
বড় হয়ে ওঠা নিয়ে চিন্তা করবে না
কাউকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করবে না
বিজয় নিয়ে চিন্তা করবে না
তোমার নিজের ভুলে না হলে পরাজয় নিয়ে চিন্তা করবে না
মশা নিয়ে চিন্তা করবে না
মাছি নিয়ে চিন্তা করবে না
সোজাকথায় পোকামাকড় নিয়ে চিন্তা করবে না
মা-বাবাকে নিয়ে চিন্তা করবে না
ছেলেদের নিয়ে চিন্তা করবে না
হতাশা নিয়ে চিন্তা করবে না
সুখানুভূতি নিয়ে চিন্তা করবে না
পরিতৃপ্তি নিয়ে চিন্তা করবে না
যা নিয়ে আসলেই ভাববে :
আমার আসলে লক্ষ্যটা কী?
অনেক ভালোবাসা নিয়ে,
বাবা