অড্রে হেপবার্ন
নিজেকে সুন্দরী মনে করতেন না!

হলিউডের স্বর্ণযুগের নায়িকা তিনি। ‘রোমান হলিডে’ (১৯৫৩) তাঁকে এনে দিয়েছিল আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকজুড়ে হলিউডি নায়িকার ইমেজ তৈরি করেছিলেন অড্রে হেপবার্ন। একই সঙ্গে সাদাকালো ও রঙিন—দুই ধরনের পর্দার নায়িকাই ছিলেন হেপবার্ন। ‘সাবরিনা’ (১৯৫৪), ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ (১৯৫৬), ‘গ্রিন ম্যানশন্স’ (১৯৫৯), ‘ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানিস’ (১৯৬১) ছবিগুলোতে নিজের অভিনয় প্রতিভার পাশাপাশি নিজস্ব ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করেছেন অড্রে হেপবার্ন। আজ ৪ মে, তাঁর জন্মদিন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তাঁর ছেলে লুকা ডটির একটি কথোপকথন ছেপেছিল ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিন। সেখানে মায়ের বিষয়ে সাংবাদিক লরা জ্যাকবসকে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন ডটি। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তা ভাষান্তর করা হলো।
‘তিনি কখনো একা একা বারে বসে সময় নষ্ট করেননি। তিনি রোমের বিভিন্ন রাস্তায় ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়িয়েছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই তাঁকে দেখলেই চিনত। শহরের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এই ছবিগুলোর বেশির ভাগই রোমের রাস্তায় তোলা।’ ভ্যানিটি ফেয়ারকে কথাগুলো বলেছিলেন অড্রে হেপবার্নের ছেলে লুকা ডটি। ‘অড্রে ইন রোম’ নামে একটি বইয়ের কাজ করছিলেন তিনি তখন। সে জন্য বিভিন্ন ফটোগ্রাফারের কাছ থেকে অড্রে হেপবার্নের প্রায় আড়াই হাজার ছবি সংগ্রহ করেছিলেন ডটি।
অড্রে হেপবার্নের স্টাইল সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডটি বলেন, ‘তিনি অন্য নারীদের মতোই সাধারণ ছিলেন। বড় সানগ্লাস এবং স্কার্ফ ছিল তাঁর ফ্যাশনের মূল অনুষঙ্গ। মাঝেমধ্যে ভিড় এড়িয়ে শপিং করতে বাজারেও যেতেন তিনি। সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপনের ইচ্ছা ছিল মায়ের মধ্যে।’
তবে নিজের সম্পর্কে মোটেও ভালো ধারণা ছিল না হেপবার্নের। নিজেকে কখনোই তিনি সুন্দরী মনে করতেন না। ডটি বলেন, ‘মা ভাবতেন, তাঁর নাক ও পা দুটো বেশ লম্বা। নিজেকে বেশ হালকা-পাতলা গড়নের ভাবতেন তিনি। আয়নার দিকে তাকিয়ে তিনি বলতেন, বুঝতে পারি না, লোকে কেন আমাকে সুন্দরী বলে!’
বয়স নিয়েও কখনো চিন্তিত ছিলেন না অড্রে হেপবার্ন। নারীরা নিজেদের বয়স ধরে রাখার জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, সেটা অনর্থক মনে করতেন তিনি। লুকা ডটি স্মৃতি হাতড়িয়ে বলেন, ‘বুড়িয়ে যাওয়া নিয়ে মায়ের কোনো আক্ষেপ ছিল না; বরং তিনি বেশ খুশি ছিলেন যে হলিউডের জাঁকজমক থেকে বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ তৈরি হলো এবং নিজেকে তিনি সময় দিতে পারবেন।’
তাহলে কি হেপবার্নের জীবনে কোনো আক্ষেপ ছিল না? ডটির উত্তর, ‘নাতি-নাতনির মুখ দেখে যেতে পারেননি, এটাই মনে হয় তাঁর আক্ষেপ। মা খুব ভালো একজন দাদি হতে পারতেন। নাতি-নাতনিদের জন্য কেক বানানো, তাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া—এসব মা জমিয়ে করতে পারতেন।’
মা-বাবার বিচ্ছেদ নিয়েও বিস্তর চিন্তাভাবনা করেছেন ডটি। ছোট বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ তাঁকে বেশ ভুগিয়েছে। অন্যদের মতো সাধারণ জীবন তিনি যাপন করতে পারেননি। লুকা ডটি বলেন, ‘৪০ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন মা। কিন্তু মায়ের বয়স ৪০ হলেও তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ৪০-এর অনেক বেশি বয়সের। দুনিয়ার ও গ্ল্যামার জগতের অনেক কিছুই তিনি দেখেছিলেন এবং অভিজ্ঞতা নিয়েছিলেন। মায়ের চেয়ে ১০ বছরের ছোট ছিলেন বাবা। পেশায় তিনি ছিলেন চিকিৎসক। তাঁর পক্ষে মায়ের মতো সেলিব্রেটির স্বামী হয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। সবাই মাকে চিনত, ভক্তরা তাঁর জন্য পাগল ছিল। একজন সাধারণ চিকিৎসকের জন্য এসব বিষয় মেনে নেওয়া মোটেও সহজ ছিল না। আমার মনে হয়, বাবা যদি মায়ের চেয়ে ১০ বছরের বড় হতেন, তাহলে হয়তো হীনমন্যতার ভুগতেন না এবং সংসারে মানিয়ে নিতে পারতেন।’
মাকে কীভাবে অনুভব করেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ডটি বলেন, ‘সুগন্ধি। মায়ের সুগন্ধির ঘ্রাণ এখনো নাকে লেগে আছে। মনে হয়, তিনি আশপাশেই আছেন। রোমে যখন বসন্ত শুরু হয়, তখন চারদিক নানা ফুলের সুগন্ধে ভরে যায়। তখন মায়ের কথা আরো বেশি মনে পড়ে।’