নায়করাজ রাজ্জাকের সেরা সিনেমা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে নায়করাজ রাজ্জাক এক অনন্য নাম। তাকে ছাড়া ঢালিউডের সোনালি সময় কল্পনাই করা যায় না। জীবনের চার দশকের বেশি সময় ধরে অসংখ্য হিট, সুপারহিট এবং কালজয়ী সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
আজও দর্শকের হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে তাঁর অসংখ্য চরিত্র ও অভিনয়। রাজ্জাকের অভিনীত নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, স্বরলিপি, রংবাজ, আলোর মিছিল, ছুটির ঘণ্টা, বড় ভালো লোক ছিল, বাবা কেন চাকর—এসব চলচ্চিত্র বাংলা সিনেমার ইতিহাসে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।
নীল আকাশের নিচে (১৯৬৯)
এই সিনেমার মাধ্যমে রাজ্জাক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব সময়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা আর সংগ্রামের কাহিনি উঠে আসে। সিনেমাতে তাঁর আবেগঘন অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে।
জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
জহির রায়হান পরিচালিত এই সিনেমাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি মাইলফলক। সিনেমাতে পরিবারের মধ্যকার স্বৈরাচারী চরিত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়। রাজ্জাকের শক্তিশালী অভিনয় এ সিনেমাকে কালজয়ী করেছে।
স্বরলিপি (১৯৭৬)
সঙ্গীতপ্রধান এই সিনেমায় রাজ্জাক অভিনয় করেন আবেগময় চরিত্রে। সিনেমার গানগুলো আজও জনপ্রিয়। প্রেম, সঙ্গীত আর পারিবারিক টানাপোড়েনের গল্পে রাজ্জাকের অভিনয় দর্শককে মুগ্ধ করে।
রংবাজ (১৯৭৩)
অ্যাকশনধর্মী এই সিনেমার মাধ্যমে রাজ্জাক এক নতুন রূপে হাজির হন। তাঁর নায়কোচিত ব্যক্তিত্ব, সাহসী চরিত্র ও অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় তাঁকে ‘নায়করাজ’ খেতাব এনে দেয়। এটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট।
আলোর মিছিল (১৯৭৪)
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ফুটে ওঠে এই সিনেমাতে। রাজ্জাক এখানে একজন সংগ্রামী তরুণের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে গভীর ছাপ ফেলেন।
ছুটির ঘণ্টা (১৯৮০)
এই শিশুতোষ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের সিনেমায় অনন্য এক সংযোজন। স্কুলজীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতা ও শিশুর কষ্টকে কেন্দ্র করে নির্মিত এ সিনেমাতে রাজ্জাকের অভিনয় হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিশেষ করে স্কুলে আটকা পড়ে শিশুর মৃত্যুর দৃশ্য আজও দর্শককে আবেগাপ্লুত করে।
বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২)
রাজ্জাক অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি মানুষের হৃদয় জয় করা একটি সাড়া জাগানো সিনেমা। সিনেমার কাহিনি ও সংলাপ দর্শককে গভীরভাবে নাড়া দেয়। এখানে তিনি সমাজের অবহেলিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো এক মহান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যান।
বাবা কেন চাকর (১৯৯৭)
দশক পাল্টালেও রাজ্জাকের জনপ্রিয়তা কমেনি। এ সিনেমাতে তিনি এক বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্তানদের জন্য কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন। দর্শকের চোখ ভিজিয়ে দেওয়া এই সিনেমা ছিল নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা।
নায়করাজ রাজ্জাক শুধু একজন নায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলা সিনেমার ইতিহাসের অংশ। তাঁর অভিনীত এই সিনেমাগুলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। আজও এসব সিনেমা টিভি বা অনলাইনে প্রচার হলে দর্শক আবেগে ভেসে যান।