সেহেরির খাওয়া দাওয়া

সুস্থ শরীরে রোজা রাখার জন্য সঠিক পুষ্টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ইফতার, সেহরি, রাতের খাবার—এ তিনটি খাবারের মাধ্যমে শরীরের যথাযথ পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে শরীরকে সুস্থ ও যেকোনো জটিলতা থেকে মুক্ত রাখা যায়। তাই ইফতারের মতো সেহরিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখতে হবে, সেহরিতে সঠিক খাবার খেলে তা আপনাকে শুধু সুস্বাস্থ্য নয়, বরং রোজার নানাবিধ শারীরিক সমস্যা, যেমন—কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি, মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, দুর্বলতা ইত্যাদি মোকাবিলায় সাহায্য করবে।
অনেকেই আছেন, যাঁরা সেহরি ঠিকমতো খান না বা শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখেন। এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়; বরং রোজা সুস্থ ও সতেজভাবে রাখার জন্য সুষম ও পরিমিত খাদ্য অবশ্যই খেতে হবে।
কার্বোহাইড্রেট
সেহরিতে শর্করা হিসেবে জটিল শর্করা (কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট) জাতীয় খাবার খুব ভালো। এই জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ দেয় এবং খাদ্যে আঁশের চাহিদা জোগায়। তাই সেহরিতে এই জাতীয় শর্করাযুক্ত খাবার খেলে তা আপনাকে সারা দিন অনেক শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম রাখবে। জটিল শর্করা জাতীয় খাবার, যেমন—লাল আটার রুটি, বাদামি রুটি, চিড়া, ওটস, সিরিয়াল, বার্লি ইত্যাদি।
প্রোটিন
সেহরিতে প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। মুরগি, মাছ, দুধ, দুধের তৈরি খাবার, ডিম ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস। এসব খাবার শুধু প্রোটিনই নয়, ফসফরাস, জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদির ভালো উৎস। এসব পুষ্টির উপাদান রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখা ছাড়াও আরো নানাবিধ কাজে সাহায্য করে।
দুধ খুব প্রয়োজনীয় একটি খাবার। প্রোটিনের পাশাপাশি আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে দুধ, যা আপনার হাড়ের সুস্থতার জন্য জরুরি। লো ফ্যাট দুধ খেলে চর্বি ও ক্যালরি কম পাওয়া যাবে, যা রক্তের কোলেস্টেরল বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া যাঁরা দুধ হজম করতে না পারে, তাঁরা দই বা ছানা খেলে এই চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। ভোররাতে চাইলে দুধ-ভাত-আম-কলা খাওয়া যেতে পারে।
যাঁরা মাছ বা মাংস খেতে না চান, তাঁরা একটি ডিম সেহরিতে খেলে শরীরের আদর্শ প্রোটিন এবং সে সঙ্গে ক্যালোরিম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে।
ফল
ভোররাতে বা সেহরিতে টক ফল না খাওয়াই ভালো। মাঝারি আঁশযুক্ত ফল বা নরম পাকা ফল বেশি উপকারী। সাধারণত পেঁপে, কলা, আম ইত্যাদি অথবা ফলের ও দুধের তৈরি কাস্টার্ড খাওয়া যেতে পারে।
সবজি
সেহরিতে অতিরিক্ত আঁশযুক্ত সবজি এড়িয়ে চলা ভালো। মাঝারি আঁশের সবজি এবং নরম সুসিদ্ধ সবজি সেহরিতে খাওয়ার জন্য ভালো। ঝিঙে, চিচিংগা, লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, গাজর ইত্যাদি খাওয়া ভালো। সেহরিতে প্রতিদিন সবজি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এতে শরীর ভালো থাকবে।
তরল
পানি হলো সেহরির সবচেয়ে ভালো তরল জাতীয় খাবার। ইফতার থেকে সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। খুব ঠান্ডা এবং খুব গরম পানি এড়িয়ে চলুন। অনেকেই সেহরিতে চা কফি খান, যা ঠিক নয়।
কেননা, এগুলো পিপাসা বাড়িয়ে দেয়। এসব খাবারের পাশাপাশি কোল্ড ড্রিংকসও এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া তরল হিসেবে দুধ, পাতলা সাগু বা সুজি, ডাল, স্যুপ ইত্যাদি শরীরের সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী খাওয়া যেতে পারে।
সেহরির খাবার যেন মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠীর রকমারি খাদ্য দিয়ে সাজানো হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে জানতে হবে। সুস্থ থাকার লক্ষ্যে তাই সঠিক সেহরি সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।
নমুনা মেন্যু
—ভাত, মাছ বা মুরগি, সবজি, খেজুর একটি
—চিড়া-দিই/ মুড়ি-দুধ, কলা/আম, খেজুর একটি
—যেকোনো ফল, দুধ, সিরিয়াল, খেজুর
লেখক : তামান্না চৌধুরী, প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।