কর্মজীবীদের খাওয়া-দাওয়া

কর্মজীবী নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ডায়েট অনেক প্রয়োজন। কেননা সঠিক খাদ্যাভ্যাস কাজের পরিমাণ বাড়াতে কর্মজীবী নারী-পুরুষ উভয়কেই দারুণভাবে সাহায্য করে। এটি মানুষকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি কাজের দক্ষতা বাড়াতে, তাকে সজীব সক্রিয় ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। কর্মক্ষেত্রে ডায়েটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে উদ্যোমি রাখা। যেন সে সুস্থভাবে কাজ করতে পারে।
সেই লক্ষ্যে দিনের শুরু থেকে আপনার খাবারগুলোকে যথাযথভাবে গ্রহণ করুন। প্রথমেই আসা যাক ক্যালোরির কথায়। এই ক্ষেত্রে আপনার বয়স লিঙ্গ, ওজন উচ্চতা ও পরিশ্রম ভেদে ক্যালোরিটি নির্ধারণ করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক শক্তি (এনার্জি) প্রয়োজন। তাই কাজের চাপে না খেয়ে থাকলে বা ক্যালোরি না গ্রহণ করলে স্বাস্থ্য তো ঠিক থাকবেই না বরং কাজের আউটপুটে অনেক বিঘ্ন ঘটবে। তাই পর্যাপ্ত ক্যালোরির চাহিদা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য থেকে মেটাতে হবে।
ওজন কমানোর জন্য অনেককেই দেখা যায় কার্বোহাইড্রেট আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলে। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা। কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চললে ওজন হয় তো বাড়ে না কিন্তু চেহারার গ্ল্যামার নষ্ট হয়ে যায়। তাই সৌন্দর্য বজায় রাখতে কখনোই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে কর্মজীবীরা সকাল বেলায় কার্বোহাইড্রেটের উৎস হিসেবে লাল আটার রুটি, চিড়া, বাদামি রুটি (ব্রাউন ব্রেড), ওটস ইত্যাদি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। দুপুরের খাবার হিসেবে অল্প ভাত, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
প্রোটিন কর্মজীবীদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কাজের চাপে অনেকেই তার সৌন্দর্য চর্চার সময় পান না। তাই ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি সুন্দর চুল ও সুস্বাস্থ্যের লক্ষে প্রোটিনের চাহিদা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুধ, মাছ, বাদাম, ডিমের সাদা অংশ, মুরগির মাংস, ডাল আপনাকে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।
শাকসবজি ও ফলমূল অনেক কর্মজীবীদের খাদ্য তালিকায় দেখা যায় না। কেননা সকালে তাড়াহুড়া করে বের হওয়া এবং দুপুরে তাড়াহুড়া করে খাবারের মধ্যে অনেকেরই দেখা যায় এগুলো খাওয়া হয় না। তাই পুষ্টির কথা মাথায় রেখে খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো ঢুকাতে হবে। যেমন : সকালে রুটির সঙ্গে সবজি, সেন্ডউইচ, দুপুরে খাবারের সঙ্গে সালাদ, কাজের মাঝখানে সকাল ১০ থেকে ১১টার সময় একটু ফল খেলেই মোটামুটিভাবে এই চাহিদা পূরণ হবে।
যাদের কর্মক্ষেত্রে অনেক বেশি মস্তিস্কের কাজ করতে হয় তারা তাদের মস্তিস্ককে সক্রিয় রাখতে কলা, খেজুর, বাদাম, কিসমিস ইত্যাদি খাবার অফিসে নিয়ে খেতে পারেন।
কর্মজীবী মানুষের শরীরে পানির চাহিদা যথযথভাবে পূরণ করতে হয়। কাজের চাপে অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ভুলে যান। তাই প্রত্যেকের উচিত যার যার ডেস্কে বড় বোতলে পানি রাখা এবং তা প্রতি আধ থেকে একঘণ্টা পরপর খাওয়া। তাতে আপনার ওজন এবং ত্বক দুটোই ভালো থাকবে এবং ইউরিন ইনফেকশন ছাড়াও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
কর্মজীবীদের জন্য জেনে রাখা ভালো
১. কোনোভাবেই সকালের নাস্তা না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না।
২. যতটা সম্ভব বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া।
৩. দীর্ঘ সময় খালি পেটে না থাকা।
৪. হালকা কিছু খাবার অফিসের ডেস্ক বা আপনার জন্য নিদির্ষ্ট ড্রয়ারে মজুদ রাখা। যেমন : বিস্কিট, খেজুর, ফল, বাদাম ইত্যাদি।
৫. বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা। যারা ঘনঘন চা পান করেন তারা রং চা খাবেন। তবে অতিরিক্ত চা এড়িয়ে চললে ভালো হয়।
৬. যাদের রাত্রিকালীন চাকরি থাকে তাদের রাত ১০টার দিকে এক গ্লাস দুধ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
শুধু ভালো কাজের জন্য নয় সারাজীবন সুস্থ্য থাকার জন্যই খাবারে অনিয়ম করা যাবে না। সারাজীবনের পরাফরমেন্স ভালো করতে ডায়েট মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি কর্মজীবীদের উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
তামান্না চৌধুরী : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।