হেপাটাইটিস সি-এর কারণ ও লক্ষণ

হেপাটাইটিস সি অনেকেরই হতে দেখা যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪২৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক সেলিমুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: হেপাটাইটিস সি আসলে কী? এর থেকে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: হেপাটাইটিস সি একটি ভাইরাস। ভাইরাসগুলো যখন আবিষ্কার করা হয় তখন বিভিন্ন ইংরেজি বর্ণ দিয়ে ভাইরাসগুলোর নামকরণ করা হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ভাইরাস যখন আবিষ্কার করা হয়, একে বলা হয় হেপাটাইটিস সি। যেহেতু এটি হেপাটাইটিস সি-এর নামেই বুঝতে পারি, এটি লিভারকে আক্রমণ করে।
প্রশ্ন: হেপাটাইসিস সিতে মানুষ সাধারণত কী কী কারণে আক্রান্ত হয়?
উত্তর: আপনারা সবাই তো হেপাটাইটিস বি-এর কথা শুনে থাকেন। তবে আমরা হেপাটাইটিস সি সম্বন্ধে জানি না, চর্চা করি না। কিন্তু এটার যে ভয়াবহতা রয়েছে সেটা জানি না। তবে সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে এর ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। এই আবিষ্কার বেশি দিনের কথা নয়, অল্প দিনের কথা। বাংলাদেশে এই ওষুধগুলো আছে।
প্রশ্ন: হেপাটাইটিস সি কী কী কারণে হতে পারে?
উত্তর: হেপাটাইটিসের যে কারণগুলো জানি এটি রক্তের মাধ্যমে হতে পারে। এরপর এটা সংক্রমিত সুঁই দিয়ে তৈরি হতে পারে। কেউ যদি রক্ত শরীরে নেয়, চেক না করে, তার যদি সি থাকে, তাহলে অন্যের হতে পারে। যৌন মেলামেশার মাধ্যমে হতে পারে। তবে বিয়ের মতো না।
প্রশ্ন: হেপাটাইটিস সিয়ের লক্ষণ কী?
উত্তর : আমরা অন্য ভাইরাসগুলো যে জানি সি ছাড়া, এ বি ডি এগুলো যেমন স্বল্পমেয়াদি হেপাটাইটিস করে, তেমনি সিও করতে পারে, তবে এর সংখ্যা খুবই কম। এর বেশির ভাগই ক্রনিক হেপাটাইটিস করে। এটা যখন শরীরের ভেতর ঢোকে, তখন লক্ষণ খুব কম মানুষের মধ্যেই হয়। ১০ থেকে ১৫ ভাগ মানুষের এই ভাইরাস ঢোকার পর স্বল্পমেয়াদি লক্ষণ হতে পারে।
প্রশ্ন: একদম অতিরিক্ত বাজে অবস্থায় লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাহলে এটা যাতে না হয়, সেই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
উত্তর: মাদকাসক্ত যাঁরা, যাঁদের বারবার রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, মনে করেন থেলাসেমিয়ার একটি রোগী, এঁদের বারবার রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়, আবার যাঁরা দাঁতের চিকিৎসা করতে গিয়ে জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি মেনে চলেন না, এতে রোগটি একজন থেকে আরেকজনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকের ওপর তাহলে দায়িত্বটা অনেকখানি চলে আসছে।
প্রশ্ন: শুরুর দিকেই যেন রোগটি ধরা পড়ে, এ জন্য কোন বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর: বি-এর যে রকম ভ্যাকসিন আছে, সি-এর সে রকম ভ্যাকসিন নেই। আমরা যদি জানি যে সি এভাবে ছড়ায়, রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, একই সুই বারবার ব্যবহারে ছড়ায়, এমনকি স্যালুনগুলোতে যেই ক্ষুর ব্যবহার করি, এগুলোর মাধ্যমে হতে পারে-এগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকলে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এসবের ক্ষেত্রে যদি জীবাণুমুক্ত জিনিস ব্যবহার করি, তাহলে ভালো হয়। অনেক সময় নাক ফোড়ানো হয়, কান ফোড়ানো হয়, যারা বিশেষজ্ঞ নয়, তারা কিন্তু একই সুঁই ব্যবহার করেন অনেকের ক্ষেত্রে। আমরা যখন নাক ফোড়াব, কান ফোড়াব যেন জীবাণুমুক্ত সুই দিয়ে এটি করি।
যখন শরীরের রক্তের প্রয়োজন হয় নেব, তখন বি হেপাটাইটিস, সি হেপাটাইটিস যেন ঠিক করে নিই। এটা করলে আর হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এর পর যাদের হয়ে যাবে, তাদের আমরা নির্ণয় করার চেষ্টা করব পরীক্ষার মাধ্যমে। দেখবেন যে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন হয়, আমরা বি সি পরীক্ষা করতে পারি। রুটিন পরীক্ষা করতে গিয়ে যদি লিভার কার্যক্রমের কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়। আপনি হয়তো পরীক্ষা করে দেখলেন তার মধ্যে লিভারের রোগ আছে, এগুলো পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে পারি। এই বেশির ভাগ রোগগুলোর কিন্তু চিকিৎসা লাগে এবং রোগটা ক্রিয়াশীল থাকে। রোগটি ক্রিয়াশীল আছে কি না দেখে আর এন এ ইতিবাচক হয়, তাহলে চিকিৎসা অবশ্যই করতে হবে।