বর্ষায় শিশুদের রোগব্যাধি প্রতিরোধে করণীয়

বর্ষাকালে শিশুদের বিভিন্ন রোগব্যাধি হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪৩৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. আবিদ হোসেন মোল্লা। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : এই সময়ে সাধারণত শিশুদের কোন কোন সমস্যা হয়?
উত্তর : এখন তো বৃষ্টি, বর্ষাকাল। বর্ষাকালে সাধারণভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। বাচ্চারা ভিজছে। ঠান্ডা লাগা একটা বড় সমস্যা। আর যে বাচ্চাগুলো বিশেষ করে অ্যাজমাপ্রবণ, তাদের ঋতুগত অ্যাজমা হয়, বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে অ্যাজমা হয়, তাদের অনেকগুলো হয় কিন্তু বৃষ্টির প্রভাবে। এই সময়ে তাদের কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো কেবল ঠান্ডা, কাশি। তবে তার চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অনেক সময় এই ঠান্ডা কাশি থেকে জ্বর হয় এবং খিঁচুনিপ্রবণ যেসব শিশু- এটাও এই সময়ে হয়। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় পানি জমবে। আবার কিন্তু সেই ডেঙ্গুর সমস্যাটা চলে আসবে। অনেক জায়গায়, বাচ্চারা এই গরমের পর পর বৃষ্টির পানি পেয়ে পুকুরে নামছে। ডোবায় নামছে। খালের মধ্যে নামছে। তাদের জন্য আরেকটি বাড়তি সমস্যা হলো ড্রাউনিং। যাকে বলে পানিতে ডুবে যাওয়া। এই কয়েকটি জিনিস হতে পারে। আরেকটি জিনিস আছে যে সমস্ত ছোট ছোট গর্ত ছিল, যার ভেতর অনেক সময় সাপ, পোকামাকড় থাকে, পানির প্রভাবে এরা অনেক সময় বেরিয়ে আসছে। বেরিয়ে এসে তারা কিন্তু উঁচু জায়গায় অবস্থা নিচ্ছে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সমস্যা এ সময়ে বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : ঠান্ডা কাশি থেকে বাঁচার জন্য বাবা-মায়েদের কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর : বাবা মায়ের যে জিনিসটির দিকে খেয়াল রাখা দরকার, যখন একটি বাচ্চা বৃষ্টিতে ভিজে এলো, দেরি না করে তাদের সঙ্গে সঙ্গে মাথা-শরীর মুছে দেওয়া জরুরি। শুকনো কাপড়ের মধ্যে রাখা ভালো। কারণ এটি না হলে এর থেকে ভাইরাসের প্রভাব হয়, ঠান্ডা লাগে। নাক দিয়ে পানি পড়ে, নাক বন্ধ হয়ে যায়। কাশি শুরু হয়। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমা আছে তাদের তো কথাই নেই।
প্রশ্ন : শিশু বৃষ্টিতে ভিজে এলে সঙ্গে সঙ্গে কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর : তার মাথা ও শরীর ভালো করে মুছে শুকনো করে দেওয়া উচিত। আর দুই নম্বর হলো দেখা যায় যদি শীত লাগছে তাহলে একটু গরম কাপড়ের মধ্যে রাখা দরকার। এই দুটো বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। ঠান্ডা লাগলে দেখবেন কিছুক্ষণ পর হাঁচি কাশি শুরু করছে। যদি সেই রকম হয়, তাহলে অ্যান্টি হিসটামিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অথবা যদি সুযোগ থাকে তবে নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বৃষ্টিতে কিন্তু অনেক জায়গায় পানি জমে যাচ্ছে। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী যে এডিস মশা, এই মশার কিন্তু বংশবিস্তার এই সময়েই হয়। সুতরাং আমাদের উচিত হবে যেটা পরিবেশের দিকে খেয়াল করে, যদি পানি জমে থাকে, গর্তের ভেতর হোক বা পাত্রের ভেতর হোক, খুব দ্রুত একে সরিয়ে দিতে হবে।
যদি শিশুর জ্বর আসে, তাহলে এই সময়ে ভুলে গেলে চলবে না যে এই সময়ে ডেঙ্গুরও আশঙ্কা থাকে। সেই জন্য এই সময়ে কোনো বাচ্চা যদি অসুস্থ হয়, যদি জ্বরে ভোগে, তাহলে আমাদের দুটো জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, তার শরীরে কোনো অংশে দানা দানা বেরিয়েছে কি না।
প্রশ্ন : এই দানাটা কি ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে বের হয়?
উত্তর : একদম না। কিছু পরে বের হয়। আমরা প্রতিদিনই যেন খেয়াল করি। যদি হয় তাহলে সেবা শুশ্রুষার পাশাপাশি দেখতে হবে, এদের শরীরে যেন পানির ঘাটতি না পড়ে। শুধু পানি নয়, এর সঙ্গে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। এ দুটো জিনিস যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের খুব ঘাবড়ানোর কিছু নেই।